১৯৭৬ সালে অস্তিত্ব পায় “দ্য থার্টিনথ ট্রাইব” নামক আলোড়িত গ্রন্থ, যাতে জায়নবাদীদের নবী বংশ তথা ইয়াকুব (আ.) বংশধর হওয়ার ব্যাপারকে জোরালো ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং তাদের কনভার্ট ইহুদি হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়।
জায়নবাদীদের দাবী অনুযায়ী তারা ইয়াকুব (আ.) এর সূত্র ধরে ইব্রাহিম (আ.) বংশধর। (তাদের রচিত) তথাকথিত তাওরাতের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহ তাদের পৃথিবী-মালিকানার দায়িত্ব চিরকালীন দিয়েছেন। বাস্তবিক পক্ষে আল্লাহ তায়ালা যে তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন, তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই বর্তমানে। তথাকথিত তাওরাতের কতিপয় অংশে আমরা খোদার সে প্রতিশ্রুতিকে ফিলিস্তিনেই সীমাবদ্ধ দেখি। আবার কোন পুঁথিতে ফোরাত নদীর পশ্চিমাঞ্চল থেকে নীলনদের পূর্বাঞ্চলের ভূমির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, যা বর্তমানে সৌদি আরবের সীমানার অন্তর্ভুক্ত ।
“দ্য থার্টিনথ ট্রাইব” গ্রন্থটি বের হওয়ার সাথে সাথে সাড়া ফেলে। আর্থার কোষ্টলার যাতে বর্তমানের ফিলিস্তিনের জবরদখলকারী জায়নবাদীদের মৌল বংশবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের মূল বংশধারা তুর্কীদের সাথে মিলিত হয়। সাতের শতক থেকে এগারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে তাদের বসবাস ছিল ইরানের কাযবিন সাগর ও ব্ল্যাক সী’র মাঝামাঝি অঞ্চলে । পুরুষাঙ্গের ন্যায় এক পাথরের পূজা করতো, তাদের ভাষায় তার নাম ছিলো “ফালুস”।
আর্থারের আলোচনার সারসংক্ষেপ দাঁড়ায়, বর্তমানের অধিকাংশ ইহুদি তাদের সেমেটিক মূলে সম্পৃক্ত নয়। আর্থার তাদের ইহুদি ধর্ম গ্রহণে রাজনৈতিক স্বার্থকেই মূখ্য বলে বিবেচিত করেন। তাদের জননেতা “খাকান” তৎকালীন ইসলামি শাসনব্যবস্থা আব্বাসীয় এবং খ্রিস্টান শাসনব্যবস্থা বাইজেন্টাইনদের থেকে স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী রাজ্য গলে তোলার নিমিত্তে তৃতীয় পন্থা হিসেবে ইহুদি ধর্মকে বেঁচে নেয়। তারপরেও সমগ্র জাতিগোষ্ঠী ইহুদি হয়নি। তাদের কেউ পৌত্তলিকতায় বহাল থাকে, আবার কেউ ইসলাম গ্রহণ করে।
বইটি প্রকাশের পরেই তা বাজারশূণ্য হয়ে যায়। কারণ আমাদের কাছে স্বতসিদ্ধ। তবে আমেরিকার কংগ্রেস লাইব্রেরিতে একটা কপি অবশিষ্ট থাকে। পরে “ওয়াশিংটন রিপোর্ট” পত্রিকা তাদের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংখ্যায় ১৯৯১ সালে পুনর্মুদ্রণ করে।
আর্থার কোষ্টলার মূলে মেজরীয় ইহুদি। প্রথম জীবনে কমিউনিস্ট ও জায়নবাদী ছিলেন। যার কারণে তিনিও অন্যদের মতো ফিলিস্তিনে আসেন। পরে পরিবর্তনের ভাঁজ পড়ে তাঁর মাঝে। কমিউনিজম মতাদর্শ ত্যাগ করেন। এর আত্মজৈবনিক বিবরণী আছে “ড্রাকনেস অফ মুন” গ্রন্থে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পান। ফলে ফিলিস্তিন ত্যাগ করে সেখানে পাড়ি জমান। সাথে সাথে জায়নবাদ থেকে আত্মমুক্তির ঘোষণা দেন। ১৯৪৯ সালে আমেরিকায় গমন করেন। সেখানে ইহুদি থেকে নিজের আত্মমুক্তির ঘোষণা দেন।
১৯৮৩ সালে আর্থার মৃত্যুবরণ করেন। ৩ মার্চে ব্রিটেনের পুলিশ তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেন। সাথে পান সুইসাইড নোট। তাতে কোন কারণ ছাড়াই নিজেদের আত্মাহুতির স্বীকৃতি দেন। বাহ্যিক ভাবে তা সন্দেহজনকই মনে হয়। তবে অনেকে মোসাদের হাতকেই তাদের মৃত্যুর মূল কারণ বলে মনে করেন।
মাশাআল্লাহ, জায়নবাদ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারছি।
চালিয়ে যান ভাই।