নব্য ইসরাইলিয়্যাত

নব্য ইসরাইলিয়্যাত সনাতন ইসরাইলিয়্যাতেরই নতুন প্রতিকৃতি। তবে তাতে যুক্তি হয় বৈজ্ঞানিক ধারা-পদ্ধতি, অভিনব বর্ণনাভঙ্গি। সমকালীন মতাদর্শের আড়ালেই তার বীজ লুক্কায়িত থাকে। অনেক গবেষক নিম্নোক্ত মতাদর্শসমূহে সে বীজ দেখতে পান :
• ফ্রয়েডের “মনোসমীক্ষন” মতবাদে
• লুসিয়ান ল্যাভি-ব্রুহলের নৈতিকতার বিবর্তনতত্ত্বে
• ব্যাক্তি-চেতনার পরবর্তে সমষ্টিগত চেতনার প্রাধান্যের ক্ষেত্রে এমিল দ্যুর্কেমের সমাজতত্ত্বে।
• ইতিহাস দর্শনের ক্ষেত্রে কার্ল মার্ক্সের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ মতবাদে।
এছাড়া আরব ও মুসলিম জাতির ইসলামিয়্যাত ধ্বংসের ক্ষেত্রে ইতিহাস বিকৃতি ও পূর্বযুগের বিভিন্ন বিদ্রোহী আন্দোলনকে সংস্কারমূলক বলা — এছাড়া আরো নানা ধরনের অপচেষ্টা এ ইসরাইলী কর্মের কাজ।

১৯৪২ সালের বিলতিমুর কনফারেন্সে ( Biltmore Conference ) পূর্বের যুগের বিদ্রোহমূলক গুপ্ত আন্দোলনসমূহ নিয়ে নতুনভাবে গবেষণা-অধ্যয়নের ধারা তৈরির প্রস্তাব হয়। তাই এ নিয়ে পাশ্চাত্য মহলে লেখালেখি ও গবেষণার কাজ শুরু হয়। ইসলাম-বিরোধী আন্দোলনগুলোকেই ‘নিরেট ইসলামি’ বলে চালিয়ে দেয়া হয়। সে ধারাবাহিকতায় কারামেতা আন্দোলনের নাম উঠে আসে। তাদের বলা হয়, প্রগতিশীল আন্দোলন। সে কাতারে জারুদি ও ত্বাহা হোসাইনের মতো প্রাচ্যীয় অনেকে শরিক হয়।

কারামেতা আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে ইসলামি ছিলোনা। বরং ইসলামি খেলাফত ধ্বংসের আন্দোলনেই সক্রিয় ছিলো তারা। তাদের সাথে যুক্ত হয় ইহুদি, মাজুসীসহ ইসলাম-বিরোধী অনেক শক্তি।
ইতিহাস-তালাশি করলে আমরা তাদের গঠনতন্ত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পাই :
• কারামেতারা তাদের কর্মকাণ্ডে ইসলামের শুধুমাত্র শিরোনামই ব্যবহার করে, প্রকৃতপক্ষে তা ইসলাম-বিরুদ্ধ আন্দোলন-ধারা।
• কারামেতা আন্দোলনের স্রোতধারা পরে যুক্ত হয় নিগ্রোদের সঙ্গে। তারা নিগ্রোদের দাসত্ব-জীবন থেকে মুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ফুসলিয়ে তোলে।
• এ আন্দোলনকে কখনও ইসলামি বলা চলেনা, কেননা তারা এক দিনের জন্য হলেও ইসলামি ধারা জীবনের অনুষঙ্গে বাস্তবায়ন করেনি। তারা ধনসম্পদ ও অর্থবৃত্তির ক্ষেত্রে সাম্যবাদী চিন্তাধারার।
• ইসলাম-বিদ্বেষ, নবী ও সাহাবাদের অবমাননা, পবিত্র স্থানসমূহে আক্রমণ-প্রবণতা তাদের মনোবৃত্তিতে মিশে ছিলো। ত্রিশ হাজারের ন্যায় হাজীদের হত্যা করে। কাবা থেকে হাজরে আসওয়াদ’কে সরিয়ে হজ্ব-পালনে মানুষদের বাধা দেয়। “হাজর” স্থানে হাজরে আসওয়াদ’কে রেখে নিজেদের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে। এভাবে ত্রিশ বছর তাদের কাছেই থাকে।
• তাদের ও ইসমাইলিয়্যা সম্প্রদায়ের আঁতাতবদ্ধতার কথা ইতিহাস-সীকৃত। যদিও বাহ্যিক ভাবে মতাদর্শ-ভিন্নতা রয়েছে।
• তাদের ও ক্রুসেডারদের সাথে গোপন ও বাহ্যিক সম্পর্কের কথা নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাব্যস্ত হয়।
• মনসূর হাল্লাজকে এসব দলের সম্পৃক্ত লোকদের মধ্যে ধরা হয়। সে আব্বাসীয় খেলাফতের ঘোর বিরোধী। কারামেতা গোষ্ঠীর নেতা জনাবী’র সাথে তার গোপন সম্পর্ক ছিলো। কারামেতা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হওয়ার কথা যখন চূড়ান্ত হয়, তখনই তাকে হত্যা করা হয়। শুধুমাত্র “আনাল হক্ব” এর মত পৌত্তলিক কথা বলাই অন্যতম কারণ ছিলোনা। ইমামুল হারামাইন তার “শামিল” গ্রন্থে এটাই উল্লেখ করেন।
এছাড়াও পাশ্চাত্যমহলে আরো যেসব বিকৃত মতাদর্শের গবেষণা শুরু হয়, এর মাঝে “ওয়াহদাতুল ওজুদ” (সর্বেশ্বরবাদ) মতবাদ অন্যতম। তাদের মতাদর্শ কখনোই একত্ববাদী হতে পারেনা। বরং তাতে রয়েছে পৌত্তলিক, অগ্নিপুজকদের প্রভাব; ভারত, গ্রীক ও পারস্যে প্রচলিত বিভিন্ন মতাদর্শের প্রত্যক্ষ কর্তৃত্ব; যেসব মতাদর্শের কুঠারাঘাত করেছে ইসলাম। তাদের মতবিশ্বাসের অন্যতম হচ্ছে সৃষ্ঠ বস্তুকে স্রষ্টা তথা উপাস্যে রূপান্তরিত করা, ইসলামি চিন্তাবৃত্তির সাথে যার পূর্ণ বিরোধ; সমন্বয়সাধন কোনভাবেই সম্ভব নয়।
সর্বেশ্বরবাদের প্রতিরোধে ইসলামি মতাদর্শের সারাংশ হচ্ছে, অস্তিত্বশীল বস্তু দু’ধরণের : অবশ্য বিদ্যমান ও সম্ভাব্য বিদ্যমান। অবশ্যম্ভাবী বিদ্যমান আছে আল্লাহর তায়ালা’র। তিনি ব্যতীত সবার অস্তিত্ব সম্ভাব্য।
এখান থেকেই আমরা বুঝতে পারি, প্রাচ্যবিদ (যা পশ্চিমায়ন-কর্মের অন্যতম বাস্তবায়ক) ও মিশনারীরা বিকৃত মতাদর্শের সমীহ করে কিভাবে :

  • ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইসলাম-বিরোধী সুফিবাদ দর্শনের ব্যাপক প্রচার-প্রসার।
  • ইসলাম-বিরোধী আন্দোলন-ধারা, যেমন : কারামেতা, বাতেনিয়্যা ইত্যাদিকে ইসলামী আন্দোলন বলে ইসলামের সঠিক ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা।

এভাবেই ইসলাম-বিরোধী কর্ম বিস্তৃত করার চেষ্টায় আছে পশ্চিমায়নবাদীরা। কিন্তু ইসলাম আল্লাহ মনোনীত ধর্ম। তাগুত ও কুফুরী শক্তি তার উৎকর্ষবৃত্তিকে কখনো থামিয়ে রাখতে পারবেনা। সকল অপবাদ ও সন্দেহের ঘেরাটোপ অতিক্রম করে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে চিরকাল। এ দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালার।

One Reply to “নব্য ইসরাইলিয়্যাত”

Leave a Reply