মাওলানা শফিউল ইসলাম কাসেমী
বিয়ে ইসলামী শরীয়তে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বৈরাগ্যকে শরীয়তে মোহাম্মাদী প্রশ্রয় দেয় না, তাই বৈরাগ্য ছেড়ে দিয়ে বিয়ে করা শরীয়তের তাকাযা। তবে বিয়ে করা কোন কোন ক্ষেত্রে ফরজ হয়, কখনো ওয়াজিব হয়, কোন ক্ষেত্রে মাকরুহ হয়, আবার কখনো হারামও
হয়, তবে সাভাবিক অবস্থায় বিয়ে করা সুন্নাতে মুআক্কাদা।
(শামী: ৪/৬৩-৬৬)
বিয়ের অনেক ফজীলত হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, এক হাদীসে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
বিবাহ করা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত মুতাবিক কাজ করলো না সে আমার ( উম্মতের অন্তর্ভুক্ত) নয়। তোমরা বিবাহ কর, কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের সামনে গর্ব করবো। অতএব যার সামর্থ্য আছে সে যেন বিবাহ করে এবং যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা রাখে। কারণ রোজা তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী।
(ইবনে মাজাহ, হাদীস: ১৮৪৬)
তবে সব নারীকে বিয়ে করা ইসলামী শরীয়তে জায়েজ নয়, কিছু মেয়েকে বিয়ে করা শরীয়তে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন: মা,দাদী, বোন,খালা ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ কুরআনে কারীমে যে সকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম বলেছেন, তার মধ্যে একজন হল অন্যের বিবাহিত স্ত্রী, যে কোন স্বামীর বিবাহ বন্ধনে বর্তমানে সংসার করছে তালাক হয়নি,এমন মহিলাকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতিত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ”
( সূরা নিসাঃ ২৪)
ইমাম বুখারী রহ.বলেন:
وَقَالَ أَنَسٌ: وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ ذَوَاتُ الْأَزْوَاجِ الْحَرَائِرُ، حَرَامٌ، إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ.
হযরত আনাস রাযি. বলেন, ( والمحصنات من النساء) তে সধবা স্বাধীনা মহিলাদেরকে বিয়ে করা হারাম বোঝানো হয়েছে, কিন্তু ক্রীতদাসীকে ব্যবহার করা হারাম নয়।
( বুখারী শরীফ, বিয়ে-শাদী প্রসঙ্গ, অধ্যায়: কোন্ কোন্ মহিলাকে বিয়ে
করা হালাল এবং কোন্ কোন্ মহিলাকে বিয়ে করা হারাম ৫১০৫ নাম্বার হাদীসের পূর্বে)
আবূ সা’ঈদ খুদ্রী রাযি. থেকে বর্ণিত:
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনায়ন-এর যুদ্ধের সময় একটি দল আওত্বাস-এর দিকে পাঠান। তারা শত্রু দলের মুখোমুখী হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয়। এদের মধ্যে থেকে দাসীদের সাথে যৌন সঙ্গম করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবা যেন নাজায়িয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন “এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” অর্থাৎ বিবাহিত মহিলা তোমাদের জন্য হারাম আর অধিকারভুক্ত দাসী তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ‘ইদ্দাত পূর্ণ করে নিবে।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস:১৪৫৬)
উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে, অন্যের বিবাহিত স্ত্রীকে (যতক্ষণ পর্যন্ত সে তালাক দিবে না এবং ইদ্দত পালন করবে না) বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ,
কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে আমরা অনেকেই মাসালাটি না জানার কারণে অন্যের বিবাহিত স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করি,
তার পর সারাজীবন হারামভাবে জীবন যাপন করি।আর সেখান থেকে হারাম সন্তান জন্ম নেয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।