সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সংকলন ও অনুবাদ: আসিফ আহমাদ
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বেও কখনো মূর্তিপূজায় অংশগ্রহণ করেননি। শুধু তাই নয়, নিজ কওমের মূর্তিপূজার ব্যাপারেও তিনি অত্যন্ত দুঃখিত ছিলেন। প্রতিবছর হেরা গুহায় তিনি একমাস এতেকাফ করতেন। এসময় তিনি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর শরীয়ত অনুসারে ইবাদত করতেন।
এভাবেই একদা তিনি হেরা গুহায় তাশরীফ আনেন। এমন সময় তাকে নবুয়তের পদমর্যাদা দিয়ে মহিমান্বিত করার পবিত্র মুহূর্ত এসে যায়। জন্মের 41 তম বছরে 17 রমজান জাগ্রত ও চৈতন্য অবস্থায় জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর কাছে আগমন করেন।
উক্ত ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জিবরীল আমাকে বললেন, ” হে মুহাম্মাদ:” اقرا”আপনি পড়ুন।”
আমি বললাম:”ما انا بقارئ-“আমি তো পড়তে পারিনা”!
তখন জিবরীল আমাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন যে মনে হচ্ছিল আমি মারা যাব। এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন: اقرا-“পড়ুন”।
আমি বললাম: “আমি তো পড়তে জানিনা”।
জিবরীল পুনরায় আমাকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরলেন যে আমি তার চাপ তীব্রভাবে অনুভব করলাম।
অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন পড়ুন! আমি বললাম আমি পড়তে জানি না। তুমি পুনরায় আমাকে ধরে পূর্বের মতই চাপ দিলেন এবং ছেড়ে দিলেন। আমি বললাম:” কি পড়বো”!?,
তখন জিবরীল তেলাওয়াত করলেন:
اقرا باسم ربك الذي خلق،خلق الانسان من علق،اقرا وربك الاكرم،الذي علم بالقلم،علم الانسان مالم يعلم.
এটা ছিল নবুয়তের প্রথমদিন, পহেলা ওহী ও কুরআনের অংশ।
খাদিজা (রাঃ)-এর ঘরে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আকস্মিক ঘটনায় খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বিপদের আশঙ্কা করতে লাগলেন এবং নিজের ঘরে ফিরে গেলেন। ভয়ের কারণে তাঁর কাঁধে কাঁপছিল। ঘরে পৌঁছে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে বললেন: আমাকে ঢেকে দাও, আমাকে ঢেকে দাও।
হযরত খাদিজা রাদিঃ তাঁকে ভয় পাওয়া ও ভীত হওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলেন। তিনি তখন সকল ঘটনা বর্ণনা করলেন। এবং বললেন, আমার বিপদের আশংকা হচ্ছে।
খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা গভীর আস্থা ও পূর্ণশক্তিতে বললেন,”কখনো নয়। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তায়ালা কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অপরের বোঝা বহন করে তার বোঝা হালকা করেন, অভাবী লোকের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন, মেহমানের খাতির-যত্ন ও মেহমানদারী করেন এবং সত্য পথে চলতে গিয়ে তকলিফ ও বিপদে মুসিবতে সাহায্য করেন।”
ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের মজলিসে
আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার নবীয়ে রহমত কিতাব লিখেছেনঃ হযরত খাদিজা রাদিঃ এ কথাগুলো তাঁর সুস্থ প্রকৃতি ও বিশুদ্ধ ফিতরতএবং আপন জীবনের অভিজ্ঞতা ও লোকের সম্বন্ধে জানাশোনার ভিত্তিতে বলেছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটি ছিল বড় ধরনের। তিনি ভাবলেন, তার জ্ঞানী ও মনীষী চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেল এর সাহায্য নেওয়া দরকার। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে সাথে নিয়ে তার কাছে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ঘটনা ওয়ারাকা কে খুলে বললেন।
ওয়ারাকা শুনতেই বলেন:”কসম সেই পবিত্র সত্তার যার হাতে আমার জীবন! আপনি এই উম্মতের নবী! আপনার নিকট সেই নামুসে আকবর এসেছিলেন তিনি হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসেছিলেন। একদিন আসবে যখন আপনার জাতি ও সম্প্রদায় আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং কষ্ট দেবে। আপনাকে বের করে দেবে, আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এই কথা শুনলেন, তখন আশ্চর্য হলেন। কেননা তিনি জানতেন কুরাইশ সমাজ তার অবস্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে জানে। তাঁকে সাদিক (সত্যবাদী )ও আমিন (বিশ্বস্ত ,আমানতদার) বলতে বলতে তাদের মুখে ফেনা উঠে যায়।
তিনি বিস্ময়ের সুরে জিজ্ঞেস করলেন, “তারা আমাকে বের করে দেবে”?!
ওয়ারাকা জবাব দিলেন,”হ্যাঁ, আপনি যেই প্রোগ্রাম নিয়ে এসেছেন সেই পয়গাম যখন ঐ অন্য কেউ নিয়ে এসেছেন তখন লোকে তাঁর শত্রু হয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে এবং তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে। বরাবরই তাই হয়ে এসেছে। আমি যদি সেদিন থাকি আর আমার হায়াতে যদি কুলায় তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে আমি আপনাকে সাহায্য করবো।
এভাবেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের সূচনা হয়। এবং খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা তাঁকে সত্যায়ন করেন। এরপর ওয়ারাকা ইবনে নওফেল তাঁকে সত্যায়ন করেন।
ওয়ারাকা বিন নওফেল এরপর বেশিদিন বেঁচে ছিলেন না।
জাবের রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার ওয়ারাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন নবীজী বলেন, “আমি ওয়ারাকাকে জান্নাতে রেশমি পোশাকে দেখেছি।”
(মুসনাদে আবু ইয়ালা, ২০৪৭)
মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে সহজ ও সাবলীল ভাষায় জাজাকল্লাহ আসিফ ভাই
আপনাকেও জাজাকাল্লাহ।