অনুবাদ: আসিফ আহমাদ
সন্তানের সঠিক ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে ত্রুটির প্রথম কারণ হচ্ছে-“পিতা-মাতার বস্তুবাদী চেতনা ও দুনিয়াদারিতে মগ্নতা”। তারা অভিভাবকত্ব ও শিক্ষা-দীক্ষার গুরু-দায়িত্বকে নিজেদের জন্য ঝামেলা মনে করছে। এর চেয়েও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, তারা নিজেরা প্রকাশ্য গুনাহে লিপ্ত।
অথচ আল্লাহ তাআলার কুদরত, অনেক সময় দেখা যায় এমন বাবা মায়ের সন্তানরা তাদের বিপরীত হয়। আল্লাহ তাআলা এই সন্তানদেরকে ইসলাম ও হেদায়েতের রাস্তায় পরিচালনা করে তাদেরকে নিজ অনুগ্রহের বারিধারায় সিক্ত করেন। এসব ছেলেমেয়েরা নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসের উপর মজবুত ভাবে অটল থাকে। তাদের চিন্তা-চেতনা আমল-আখলাকে ইসলামের আলোকচ্ছটা দেখতে পাওয়া যায়।
পিতা মাতার উপর সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার যে দায়িত্ব তা কোনো গোপন বিষয় নয়। এটি একটি সামাজিক দায়িত্বও বটে। আর এতে ত্রুটির কারণে এর খারাপ প্রভাব সমাজ এবং উম্মাহ উভয়টিতে সমানভাবে পরে।
কিন্তু আফসোস, আজকালকার অনেক পিতা-মাতা এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বকে চরম অবহেলা করেন। এমনকি অনেকে তো ইসলামী অনেক ভালো কাজ করতে নিষেধ করেন এবং ‘ইসলামে’ নিষিদ্ধ এমন কাজের আদেশ করেন। তাদের ব্যাপারে যেন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
ارايت الذي ينهي عبدا اذا صلى
অর্থাৎ, “আপনি কি দেখেছেন যে মানুষকে বাধা দেয় যখন সে নামাজ পড়ে।“
এসব পিতা-মাতার অন্যায় ঐ সমস্ত কাফিরদের থেকেও বড় যারা ইসলামের দাওয়াতে বাধা প্রদান করে।
মানুষকে সত্যধর্ম গ্রহণে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনতে বাধা দেয়। হেদায়েত ও নূরের সামনে প্রাচীর নির্মাণ করে।
অথচ আশ্চর্য ব্যাপার, তাদের সন্তানরা আজ পরিপূর্ণ দ্বীন মেনে চলতে শুরু করেছে। যেন নবীজি (সাঃ) এদের ব্যাপারেই বলেছিলেন, যদি এরা ঈমান আনয়ন নাও করে, তবু আমি আশা করি তাদের বংশে এমন সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করবে যারা আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদকে স্বীকার করে নেবে।
দ্বিতীয় কারণ
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, সন্তানদেরকে ইসলামি শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহ ও অমনোযোগীতা। অর্থাৎ, অভিভাবকরা নিজেরা তো কিছুটা দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করেন, কিন্তু নিজ সন্তানদেরকে ইসলামের শিক্ষা দেন না। বেশিরভাগ সময় অর্ধ বয়স্ক পিতা-মাতার বেলায় এই অবস্থা দেখা যায়। তারা নিজেরা কিছুটা দ্বীন মেনে চলেন, কিন্তু তাদের সন্তানরা দ্বীনি কালচার থেকে একেবারেই দূরে থাকে। ইসলামের বাহ্যিক কোন আলামত তাদের মাঝে দেখা যায় না। ছোট-বড় সব বিষয়ে এই প্রজন্ম বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে পছন্দ করে। আমরা অনেক সময়ই এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করি, মুসলিম দেশের কোন ব্যক্তি যখন পাশ্চাত্যের কোন দেশে যায়, প্রথম প্রথম তো সে ইসলামকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। নামাজে, জুমায় শরিক হয়। এরপর আস্তে আস্তে তার অধঃপতন শুরু হয়। পাশ্চাত্যের সাথে মিলে যাওয়ার জন্য শরীয়তের সব হুকুম আহকাম ছেড়ে দেয়।
পাশ্চাত্য সমাজে আমরা আরো প্রত্যক্ষ করি যে, সেখানকার কোন মুসলিম মহিলা নিজে তো কিছুটা পর্দা করে চলেন। কিন্তু ঠিক এই মহিলাটিরই মেয়ে অর্ধউলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করে। আর ওই সমাজে এই চিত্র অহরহ। মুসলিম সন্তানরা আজ তাদের দ্বীন থেকে এতটাই দূরে সরে পড়েছে।
সন্তানের তরবিয়ত ও ইসলামী শিক্ষার এই দায়িত্ব ছিল মা বাবার। এছাড়াও সমাজ রাষ্ট্র ও উম্মতের সকল সদস্যের দায়িত্ব যে তারা নতুন প্রজন্মের ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। সঠিক আকিদা ও ইসলামী চেতনা শিখাবে। কারণ, এটি এত ব্যাপক ও বড় দায়িত্ব যে, সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই দায়িত্ব যথাযথ আদায় করা সম্ভব না।
আর এই তরবিয়ত দ্বারা নতুন প্রজন্ম তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের সাথে গভীর সম্পর্ক অনুভব করতে পারবে। আর দুই প্রজন্মের মাঝে ব্যবধান দূর হবে।
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম (রহঃ) বলেন,যে ব্যক্তি নিজ সন্তানদের সঠিক শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করেনা, বরং সন্তানদেরকে আপন ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়, সে অনেক খারাপ করল।
পিতা-মাতার কারণে আজ কালকের ছেলে-মেয়েরা বিপথে যাচ্ছে। কেননা তারা ছেলেমেয়েদের অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। ইসলামের আহকাম এবং চিন্তাধারা শিক্ষা দেননি। ফলাফল দেখা যাচ্ছে একেবারে কম বয়সেই ছেলেমেয়েরা উচ্ছন্নে যাচ্ছে। যার ফলে মা-বাবাও বয়স হবার পরে সন্তানের যত্ন-আত্তি থেকে মাহরুম হচ্ছে। শেষ বয়সে হারাচ্ছে অবলম্বন।
আমরা অনেক সময় প্রত্যক্ষ করেছি, বয়স হবার পর সন্তানকে পিতা অবাধ্যতার কারণে রাগারাগি করেছেন, তখন সন্তান উত্তর দিয়েছে, “আপনিই তো ছোটকালে আমাকে অবাধ্যতা শিখিয়েছেন। তাই এখন তো আমি অবাধ্য হবোই।“
সন্তানের শিক্ষাদিক্ষায় ইসলামের পদ্ধতি
ইসলাম শুধুমাত্র তরবিয়তের জিম্মাদারী দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং এর জন্য গাইডলাইনও দিয়েছে। পিতামাতার জন্য উত্তম কর্মপদ্ধতি ও পন্থা নির্দেশ করেছে। এমন একটি পদ্ধতি দিয়েছে যা জন্মের আগে থেকে নিয়ে জীবনের বিভিন্ন মারহালা ও পর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেয়। শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন, এরপর একজন পূর্ণাঙ্গ বুদ্ধিমান ও হুশিয়ার হওয়া পর্যন্ত জীবনের সকল পর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেয়।
দ্বীনদার মুসলিম ভাই-বোনদের সব সময় চিন্তা থাকে যে, তারা তাদের সন্তানদের তরবিয়ত এবং শিক্ষা দীক্ষা কিভাবে আঞ্জাম দিবেন! শিশুদেরকে নষ্ট হওয়া এবং পদস্খলন থেকে কিভাবে বাঁচাবেন!? শৈশব কৈশোরের বিপদসংকুল ঘাঁটিগুলোকে কিভাবে পার করিয়ে দিবেন!
কিভাবে শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করলে তার ভবিষ্যৎ হবে সফল ও সুন্দর! এমনকি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হবে কল্যাণকর!
এসকল শংকা ও প্রশ্নের একমাত্র জবাব হচ্ছে, “আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ এবং শরীয়তের ঐ সমস্ত নির্দেশনা ও মাধ্যম খুঁজে বের করতে হবে, যা শিশু-কিশোরদের প্রতিপালন ও সঠিক শিক্ষা-দীক্ষার জন্য ভীত ও রাহনুমা হবে ।
চলবে ইনশাআল্লাহ।