সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আসিফ আহমাদ
সিরাত শব্দের শাব্দিক অর্থ জীবনী। সুতরাং সাধারণভাবে সিরাতুন্নবী অর্থ নবীজির জীবনী। আমরা জানি,একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব যত বড় হয়, তার জীবন তত বিস্তৃত হয়।
যেমন, একজন সাধারন মানুষের জীবন জীবনের যত দিকে ছুঁয়ে যায়,একজন রাজনীতিবিদের জীবন তার চেয়ে অনেক বেশি জীবনের নানা দিক স্পর্শ করে। তার জীবন হয় আরো বিস্তৃত। সমাজের অনেক দিক তার চোখে ধরা পড়ে যা একজন সাধারন মানুষের চোখে ধরা পড়ে না।
পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত মানুষ এ ধরায় আগমন করেছে এবং পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত আগমন করবে সবার চাইতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ছিল বেশি বিস্তৃত। মানুষের জীবনে এমন কোনো দিক নেই, যার দিকনির্দেশনা আমাদের নবীজির জীবন থেকে পাওয়া যাবে না।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وما ارسلناك الا رحمة للعالمينঅর্থাৎ, জগতবাসীর জন্য আমি তোমাকে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।(আম্বিয়া: ১০৭)
অপর একটি আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
এছাড়াও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,قال الإمام أحمد : حدثنا عفان ، حدثنا عبد الواحد بن زياد ، حدثنا المختار بن فلفل ، حدثنا أنس بن مالك قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ” إن الرسالة والنبوة قد انقطعت ، فلا رسول بعدي ولا نبي . “অর্থাৎ, রিসালাত ও নবুওতের ধারা শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং আমার পরে কোনো রাসুল বা নবী আসবে না ।মোদ্দাকথা নবীজির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নবুয়ত ও রিসালাতের ধারা শেষ করেছেন। এবং তার মাধ্যমে আমাদেরকে একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা দান করেছেন।আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইসলামকে আমাদের জন্য পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। আর পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে। সুতরাং তাঁকেও আল্লাহ তাআলা সমগ্র জগতের জন্য পূর্ণাঙ্গ একজন পথপ্রদর্শক রোল মডেল হিসেবে পাঠিয়েছেন।তাই সিরাতুন্নবী শুধুমাত্র নবীজির জীবনের কিছু ঘটনা জানার নাম নয়। এটি সুবিস্তৃত একটি বিষয়। কূলহীন সমুদ্র।আজ পর্যন্ত শত শত হাজার হাজার গ্রন্থ রচিত হয়েছে নবিজির জীবনকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে। কিয়ামত পর্যন্ত হতেই থাকবে। কিন্তু এই আলোচনা শেষ হবে না।
আজ ১২ ই রবিউল আউয়াল। কোথাও কোথাও এই দিনে নবীজির জন্ম বার্ষিকী পালন করা হয়। কিন্তু গ্রহণযোগ্য ইসলামিক স্কলার ও আলিমরা এই জন্মবার্ষিকী পালন করাকে সমর্থন করেন না।কারণ সাহাবায়ে কেরাম নবীজির ইন্তেকালের পর কখনোই এই জন্মদিন পালন করেননি। যদি ইসলামে নবিজির জন্মদিন পালন করার কথা থাকত, তাহলে তারা অবশ্যই পালন করতেন।বরং আমাদের উচিত, নবীজিকে পাঠ করা। জীবনের সবক্ষেত্রে নবীজির জীবন থেকে আলো গ্ৰহন করা।এটিই ভালবাসার দাবি।কবি বলেন,
لو كان حبك صادقا لأطعتهإن المحب لمن يحب مطيع
অর্থাৎ, যদি তোমার প্রেম খাঁটি হতো তবে তো তুমি তার অনুগত হতে। কারণ প্রেমিক তো প্রেমাষ্পদের অনুগত থাকে।নবীজির সিরাত আলোচনা করার উদ্দেশ্য,নবীজির সিরাত আলোচনা করার উদ্দেশ্য বোঝা জরুরি। আমরা যে নবীজির জীবনী আলোচনা করব এর উদ্দেশ্য কি? শুধুমাত্র নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের কিছু ঘটনা জানা এবং তৃপ্তি লাভ করে এর উদ্দেশ্য নয়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু সালামের জীবনী আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার জীবন থেকে আমাদের আদর্শ গ্রহণ করা। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন
لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة
অর্থাৎ, তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মাঝে উত্তম আদর্শ হয়েছে। (আহযাব:২১)
অর্থাৎ যেকোন মানুষ তার জীবনের যে কোন শাখার জন্য যদি উত্তম আদর্শ অনুসন্ধান করে, তাহলে সে নবীজির জীবনে তার জন্য পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ আদর্শ পেয়ে যাবে।