আল্লাহর উপরে ভরসার (তাক্বওয়ার) গল্প

আল্লাহর উপরে ভরসার (তাক্বওয়ার) গল্প-০১

মূল লিখক : মাসুম মাহমুদ

সাহাবা আজমাইন অলি আউলিয়া আল্লাহ ওয়ালা বুজুর্গদের আল্লাহ তালার উপরে ভরসা করার জন্য আল্লাহতালার সাহায্য ও রহমত পাওয়ার গল্পসমূহ আমরা অনেকেই জানি। আমাদের মাঝেও অতি সাধারন মুসলমানদের মধ্যেও যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম মেনে আল্লাহতালার উপর ভরসা করে আল্লাহতাআলা তাহাকে রহমত দ্বারা সাহায্য করবেন। এরকম একটি বাস্তব ঘটনা নিয়ে লিখছি।

আমার অনেক প্রিয় এক ভাই। বেশ বড় এক কোম্পানীর ম্যানেজার। বেতন কত পান না বলি, তবে একটা অনুমান দেই, আমার একচুয়াল স্যালারি উনার বাসা ভাড়ার সমান!যেহেতু ম্যানেজার, নানান প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে হয়। দ্বীনের পথে চলার অনেক প্রেরনা পাই ভাইকে দেখে।

প্রত্যেক মুমিন এর জন্য আল্লাহ্‌ সুবহানা তায়ালা হালাল/হারাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এমনি স্পষ্ট হারাম হলো #সুদ, এবং সুদ সম্পৃক্ত চাকরী, প্রতিষ্ঠান সবই। গল্পতে প্রবেশ এর আগে কিছু রেফারেন্স পড়ুন খুব মোনযোগ দিয়েঃ

১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,যদি তোমরা (সুদ) পরিত্যাগ না করো তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।” [সূরা বাকারা- ২৭৯]

২. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,”যারা সুদ খায় তারা ঐ ব্যক্তির ন্যয় দণ্ডায়মান হবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা উন্মাদ করে দিয়েছে। এটা এ কারণে যে তারা বলে, ক্রয় বিক্রয় তো সুদের মত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ক্রয় বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।” [সূরা বাকার- ২৭৫]

৩. আবূ জুহাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি সুদ খায় এবং যে ব্যক্তি সুদ দেয় উভয়ের উপরই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।” [সহীহ বুখারী; হা.নং ৫৯৬২]

৪. অন্য এক হাদীসে রয়েছে,”যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে ব্যক্তি সুদ দেয়, যে ব্যক্তি সুদের সাক্ষী হয় এবং যে ব্যক্তি সুদের লেখক হয় সবার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।” [সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৩৩৩৩]

৫. সামুরা ইবনে জুন্দুব রাযি. বর্ণনা করেন,”রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি রাতে স্বপ্ন দেখি, দু-ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমার হাত ধরল এবং আমাকে তারা একটি পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা হাঁটছিলাম, সহসা এক রক্ত নদীর তীরে গিয়ে উপস্থিত হলাম। নদীটির মাঝে এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান রয়েছে। তার সম্মুখে পাথর। নদীর তীরে এক ব্যক্তিকে দেখা গেল। রক্ত নদীতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি যেই নদীর তীরে উঠার জন্য সামনে অগ্রসর হয় নদীর তীরে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি অমনি তার মুখে পাথর মেরে তাকে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়। এমনিভাবে যখনি সে তীরে উঠে আসতে চায় তখনি তার মুখে পাথর মেরে পেছনে পাঠিয়ে দেয়। আমি বললাম, ব্যাপারটি কি? তখন তারা বললেন, রক্ত নদীর মাঝে যে ব্যক্তিটিকে দেখছেন সে হলো সুদখোর।” [সহীহ বুখারী; হা.নং ২০৮৫]

গল্পের এই ভাই সেই প্রতিষ্ঠান এ দীর্ঘদিন থেকেই আছেন। অনেক প্রজেক্ট এ কাজ করতে করতেই এতদিন চলে গেছে। হঠাৎ অফিস থেকে উনাকে জানানো হয় একটা নতুন প্রজেক্ট এ কাজ করার কথা যার স্পষ্ট সুদের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। সভাবতই অনেকের সাথে কথা বলে না করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কাজ হলো না। সেখানেই কাজ করতে হবে ভাইকে আপাতত। শেষে বলা হল জাস্ট ৫/৬ মাস কাজ করেন, তারপর নতুন প্রজেক্ট আসবে তখন ছেড়ে দিতে পারবেন। এখন কি করার??ম্যানেজার পদে বহাল থাকা অবস্থায় কি জব ছেড়ে দিবেন?৬ মাসই তো, করি তারপর তাওবা করে নিবেন?

প্রিয় স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করলেন, তিনি সুন্দর ভাবেই বলে দিলেন ভাইকে- তারা না খেয়ে থাকবেন তবু চান না ভাই হারাম এ প্রবেশ করেন ১ মিনিট এর জন্য এই দুনিয়ায়। আল্লাহু আকবার!!!এই ভাই একদিন নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন দ্বীন খুজে পেয়ে, লোন/সুদ থেকে মুক্তি পেতে!এই সময়েও ঠিক তাই করলেন, জব ছেড়ে দিবেন, সিদ্ধান্ত নিলেন।জি ঠিক শুনেছেন, জব ছেড়ে দিবেন ফাইনাল করলেন, লাখ টাকা বেতন এর জব!অফিসে আবার যোগাযোগ করলেন, ২/১ দিন মেইল আদান-প্রদান হলো। অবশেষে হুট করেই মেইল পেলেন, উনাকে নতুন একটি প্রজেক্ট এ যুক্ত করা হয়েছে যেখানে হারাম কিছু নেই!সুবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহ!!! কিছু কি উপলব্ধি করতে পারছেন??? তাক্বওয়া’র গল্প গুলো আসলে এমনই…..

One Reply to “আল্লাহর উপরে ভরসার (তাক্বওয়ার) গল্প-০১”

Leave a Reply