ইসলামের প্রথম খলিফা

লেখক: মাওলানা আসআদ হাসান


নাম ও বংশ পরিচয়-
নাম:আব্দুল্লাহ
উপনাম:আবু বকর
উপাধি :ছিদ্দীক, আতীক
———————-
পিতা:উছমান
উপনাম:আবু কুহাফা
————-
মাতা:সালমা
উপনাম:উম্মুল খায়র
————-
তিনি সকলের কাছে আবু বকর নামে পরিচিত ।
এবং পিতা-মাতা যথাক্রমে -আবু কুহাফা-উম্মুল খায়র নামেই বেশি পরিচিত ।
তাঁহাদের আসল নাম অনেকের কাছেই অজানা ।
—————-
আবু বকর (রাদিঃ) এর বংশ সপ্তম পূর্ব পুরুষে গিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধরদের সাথে মিলে যায় ।

জন্ম
আবু বকর (রাদিঃ)মক্কা নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন ।
তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুই বছরোর্ধ ছোট ছিলেন।নবীজীর ইন্তিকালের ২বছর কয়েক মাস পর তিনি ইন্তিকাল করেন।সেই অনুপাতে আবু বকর (রাদিঃ)এর বয়স নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু বেশি ছিলো ।অর্থাৎ ৬৩বছর থেকে কিছু বেশি ।

অবয়ব প্রকৃতি
আবু বকর (রাদি:)এর গায়ের রং ছিলো সাদা, গঠন ছিলো লম্বা এবং মুখমণ্ডল গোলাকৃতি ।’
তাঁর কপাল ছিলো প্রশস্ত ।অধিকাংশ সময় কপালে ঘামের আভাঁ প্রস্ফুটিত হতো ।
মাথার চুল ছিলো পাতলা।অধিকাংশ সময় মাথায় মেহেদির খেজাব করতেন ।তিনি অসংখ্য গুণের অধিকারী ছিলেন ।তাঁর মাঝে বিদ্যমান ছিল নমনীয়তা, সহনশীলতাএবং সাহসিকতা ।
তিনি ইসলাম পুর্ব ও পরবর্তী জীবনে কখনো মদ বা নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করেন নি।
—————————

আবু বকর রাজি:এর ইসলাম গ্রহণ
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত প্রাপ্তির পর আবু বকর (রাদি:)এর কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ করা হলে তিনি অন্যদের মতো কালবিলম্ব না করে তাৎক্ষণিক ইসলাম গ্রহণ করেন ।এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইসলামের উপর অবিচল থাকেন ।যুবকদের মধ্যে সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণ কারী হলেন আবু বকর রাজি:।সৌভাগ্যের বিষয় হলো-নবীজীর একমাত্র প্রিয় সঙ্গী হলেন আবু বকর (রাদিঃ)।তিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্তে মহা বিপর্যয়ের সময়েও তাঁর বন্ধনকে অটুট রেখেছেন।

আবু বকর (রাদি:)এর বদান্যতা
ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে আবু বকর( রাদিঃ)কে সমাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো ।তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ আল্লাহর এবং তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যয় করে দেন ।
তিনি তাঁর সম্পদ দ্বারা অসংখ্য গরীব মুসলমানদের আযাদ করেছেন ।যারা ধুকে ধুকে অসহ্য নির্যাতন সয়ে যাচ্ছিল এবং গোলামির জিন্দগি অতিবাহিত করছিল ।তাঁর আযাদ করা গোলামদের মধ্য হতে অন্যতম হলেন বেলাল রাজি:।তাঁর বদান্যতার স্বীকৃতি স্য়ং নবীজীর পবিত্র যবান থেকে এরুপ পাওয়া যায় যে,তিনি বলেন “আবু বকরের মাল থেকে আমি যতটুকু উপকৃত হয়েছি তা অন্য কারো মাল থেকে হয়নি”।
এক হাদিসে এসেছে যে,নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর (রাদিঃ)এর সম্পদ নিজের সম্পদের মতো ব্যবহার করতেন।
অন্য এক হাদিসে এসেছে যে, নবীজী বলেন-আবুবকর ব্যতীত সকলের ইহসানের প্রতিদান দিয়ে দিয়েছি।আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন আবু বকরকে তাঁর প্রতিদান দিবেন ।

নবীজীর সাথে আত্মীয়তার বন্ধন
খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার ইন্তেকালের পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় বিষণ্নতায় ভুগতেন।‌‌এ অবস্থা দেখে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নিজের অল্পবয়সী প্রিয় মেয়ে আয়েশাকে নবীজির সাথে বিয়ে দেন। যিনি পরবর্তীতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।এ বিবাহের কারণে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরের জামাতা হন এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নবীজির শ্বশুর।

খেলাফত
নবীজির ওফাতের পর সকল সাহাবায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে খলিফা নির্বাচন করা হয়। এবং সকল সাহাবায়ে কেরাম 13- 3 -11 হিজরীতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। তিনি দু’বছর চার মাস খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি 13 হিজরীর জুমাদাল উখরাতে জ্বরে আক্রান্ত হন যা লাগাতার 15 দিন স্থায়ী ছিল। যখন তিনি বুঝতে পারলেন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে তখন সকল সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে ওমর রদি আল্লাহ তা’আলা আনহু কে খলিফা নির্বাচন করেন।

———মৃত্যু——
22-6-13 মঙ্গলবার রাতে মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে পরলোকগমন করেন মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল 63 বছর কয়েক মাস। ওসিয়ত মোতাবেক গোসল কার্য সম্পাদন করেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস। এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জানাযার নামায পড়ান। পরিশেষে নবীজির পাশে দাফন করা হয়।এভাবেই তিনি নবীজির মৃত্যু পূর্ব ও পরবর্তী জীবনের সঙ্গী হয়ে গেলেন।

Leave a Reply