লেখক: মাওলানা রফিকুল ইসলাম
মানুষ সামাজিক জীব৷ প্রতিটা সামাজিক জীবই পরনির্ভরশীল হয়৷ পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই তাই পরনির্ভরশীল৷ কেউ শতভাগ স্বনির্ভরতার দাবি করতে পারবে না৷ কোন না কোন দিক দিয়ে অন্যের কাছে মানুষকে হাত পাততেই হয়৷
বিপদে দুর্যোগে অন্যের কাছে হাত পাতা, ধর্ণা দেওয়া শরীতয়ে নিষেধ করা হয়নি৷ এক মানুষের বিপদে পার্শ্ববর্তী মানুষকে বরং এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে৷ মানুষের আর্থিক সংকটে তাই নিকবর্তী স্বজন-পরিজনকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বলা হয়েছে৷
কেউ বিপদে পড়ে অর্থ চেয়ে পরবর্তীতে শোধ করে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি পেশ করে থাকে, শরিয়তে তাকে কর্জে হাসানাহ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে৷ যিনি করজ বা ধার দিয়ে থাকেন, তার ব্যাপারে অনেক অনেক ফজিলত এবং মর্যাদার কথা পবিত্র কুরআন শরীফেও বিধৃত হয়েছে৷
কুরআন মাজীদের দীর্ঘতম সুরা হলো ‘সুরা বাকারা’৷ এর ১৪৫ নং আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান—
‘এমন কে আছে? যে ব্যক্তি আল্লাহকে ঋণ দিবে? উত্তম ঋণ৷ আল্লাহ পাক তাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে প্রতিদান দিবেন৷ আল্লাহই স্বচ্ছলতা এবং সংকীর্ণতা দান করেন৷ আর তার দিকেই সকলকে ফিরে যেতে হবে’৷
আয়াতে আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তার বান্দাকে ঋণ দেওয়া৷ কারণ আল্লহর টাকা পয়সার দরকার নেই৷
তো কর্জে হাসানা বা ধার-সহায়তার ফলিজত আমরা কুরআম মাজীদ থেকে পেলাম৷ আমাদের কখনো উচিত হবে না কারো বিপদে ঋণ-সহায়তায় পিছিয়ে থাকা৷
হাদীস শরীফেও রাসুল সা. কর্তৃক ঋণদানের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক এরশাদ রয়েছে৷ যেমন—এক হাদীসে এসেছে, রাসুল সা. বলেছেন, আমি মেরাজে গিয়ে দেখি বেহেশতের দরজায় লেখা, খয়রাতের ছওয়াব ১০ গুণ আর কর্জে হাসানর ছওয়াব ১৮ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে৷
এ ধরণের বহু হাদীসেই কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণের ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে৷
আবার ঋণ গ্রহণের পর তা আদায় করতে যেন গড়িমসি না করা হয় সে ব্যাপারেও পবিত্র কুরআনে সতর্কবাণী রয়েছে৷ যেমন—
‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন পরস্পরে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিখে নাও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮২)
অনেক সময় খাতক ঋণ আদায়ে অক্ষম বা সময়সীমা রক্ষা করতে অপারগ হয়ে পড়েন৷ তখন ঋণদাতা যেন তাকে স্বচ্ছলতা পর্যন্ত সময় দেয় সে ব্যাপারেও কুরআন মাজীদে দিকনির্দেশনা এসেছে৷ যেমন—
‘আর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, তাহলে তাকে স্বচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, যদি তোমরা তা জানতে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮০)
সবশেষে বলবো, ঋণদান বা কারো বিপদে অর্থসহায়তায় আমরা কখনো পিছপা হবো না৷ কুরআন-হাদসে বর্ণিত ফজিলতের দিকে তাকিয়ে আমরা বেশি বেশি ঋণ প্রদানে উৎসাহী হবো৷ হতে পারে আজকে আমি সুখে আছি৷ আমার ঋণের দরকার নেই৷ কিন্তু কালকেও যে আমি সুখে থাকবো, কোনরূপ বিপদ-আপদে পড়বো না এর গ্যারান্টি কি? তখন তো আমাকেও হাত পাততে হবে অন্যের কাছে৷ তাহলে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে কুণ্ঠিত হবো কেন? আল্লাহ পাক সকলকে কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণ প্রদানে আগ্রহী হওয়ার তৌফিক দান করুন৷