আসিফ আহমাদ
পবিত্র ঈদুল আযহা সমাগত। এই ঈদে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ব্যস্ততা হচ্ছে কুরবানী। আমাদের দেশে প্রতি বছর কোরবানিকে কেন্দ্র করে প্রায় লক্ষাধিক পশু কোরবানি করা হয়। তবে আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে, প্রতিবছরই কিছু অদ্ভুত লোক এই কোরবানির ব্যাপারে নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে। অথচ আমাদের দেশে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলেও কুরবানীর অপরিসীম গুরুত্ব বোঝা যায়।
বাংলা ট্রিবিউনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে কমবেশি ৫৫ লাখ গরু ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকায় বেচাকেনা হয়। এ ছাড়াও ৪০ লাখ ছাগল, ভেড়া ও খাসি গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা ধরলে এ বাবদ লেনদেন হয় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর প্রায় ৯৯ শতাংশ কোরবানির পশুই কেনা হয় গরিবের কাছ থেকে, যারা কোরবানি উপলক্ষে এই পশুগুলো লালন পালন করেন। এতে গরিবের অর্থনৈতিক চাকা সচল হয়। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গ্রামগঞ্জের বাজারগুলো সচল হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কুরবানীর গুরুত্ব অনস্বীকার্য হওয়ায় এখন প্রোপাগান্ডার ধরন পাল্টানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, “কুরবানীর বদলে সদকা করলেই তো গরিবদের বেশি উপকার হবে!”
শুনতে ভালো লাগলেও কথাটি বাস্তবতাবিবর্জিত!
কারণ রিপোর্টটিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রফতানি খাতে চামড়ার অবস্থান তৃতীয়। কোরবানির ওপর ভর করেই টিকে আছে বিপুল সম্ভাবনার এ খাতটি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই (জুলাই-আগস্ট) বাংলাদেশ থেকে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের জুতা রফতানি করা হয়। বাংলাদেশ থেকে ইতালি, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর চামড়াজাত পণ্য রফতানি করা হয়। মোট চামড়ার ৬০ থেকে ৭০ ভাগই সংগৃহীত হয় কোরবানি ঈদে। এবার কোরবানির সময় ৫৫ লাখ পশুর চামড়া কেনার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল ব্যবসায়ীদের।
কোরবানির সময় চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ১ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা জড়িত। লবণ হলো চামড়া সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান। গত বছর কোরবানি উপলক্ষে ৪০ হাজার টন শুল্কমুক্ত লবণ আমদানি করেছিল সরকার। কোরবানি উপলক্ষে লবণের ব্যবসাও চাঙ্গা হয়। চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজন হয় বিপুল জনবলের। তখন শ্রমিকরা পান তাদের শ্রমের চড়ামূল্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়।(সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন)
আর এ সবকিছু কুরবানী ছাড়া সম্ভব নয়।।
সর্বোপরি কথা হচ্ছে, কুরবানি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আদেশ। তাই কোরবানির মাধ্যমে এই আদেশের আনুগত্য ছাড়া অন্য কোন পন্থা নেই যার মাধ্যমে কুরবানীর দায়িত্ব আদায় হতে পারে।
মুফতি শফি (রঃ) লিখেছেন, “একথা স্পষ্ট যে পশুর মূল্য সদকা করা বা অন্য কোন নেক কাজে লাগিয়ে দেওয়া কখনোই কুরবানীর আমলের সমকক্ষ হবে না। যেমন নাকি রোজার বদলায় হজ কিংবা যাকাতের পরিবর্তে হজ যথেষ্ট হয় না ঠিক তদ্রূপ কুরবানীর বদলায় সদকা যথেষ্ট হবে না।(মাসায়েলে কুরবানী)