তামিম মুনতাসির
বুনানে হামাল হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর একজন বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বাগদাদের অধিবাসী ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে মিশরে বসবাস করতে লাগলেন। আমজনতা ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গ সবার নিকট তিনি একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে মানুষের অন্তরে আল্লাহ ওয়ালাদের প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন একজন মুকুটহীন বাদশা। একদিন হামাল মিশরের বাদশা ইবনে তওলুনকে কিছু উপদেশ দিলেন। কিন্তু বাদশা তা সহ্য করতে পারল না এবং খুব রাগান্বিত হলো। আর সিপাহিদের আদেশ করলো যেন তাকে হিংস্র বাঘের খাঁচায় ফেলে দেওয়া হয়। মানুষ নিজের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের আশ্চর্যজনক প্রতিশোধের পদ্ধতি আবিষ্কার করে। প্রতিশোধের যে পদ্ধতি যত কঠিন হবে, প্রতিশোধ নিয়ে সে সে পরিমাণ পরিতৃপ্ত হবে। বিন হামাল ক্ষুধার্ত ও হিংস্র বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করা হলো। কিন্তু বাঘ তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার শরীরের ঘ্রাণ নিতে লাগলো। উপস্থিত ব্যক্তিরা তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখার আশায় ছিল কিন্তু তাদের এই আশা মাটি চাপা পড়লো। যখন তারা দেখল বাঘ তাকে স্পর্শও করল না তখন তাকে বাঘের খাঁচা থেকে বের করা হলো।কিন্তু এরচেয়েও আশ্চর্যজনক ঘটনা এই যে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল যখন বাঘ আপনার গায়ের গন্ধ শুকতে ছিল ওই সময় আপনার অন্তরের অবস্থা কেমন ছিল??
তিনি বললেন “আমি ওই সময় প্রাণীদের উচ্ছিষ্টের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যকার যে মতবিরোধ আছে তা নিয়ে চিন্তা করতেছিলাম যে তার উচ্ছিষ্ট পবিত্র না অপবিত্র”। মৃত্যু মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর তাও এমন ভয়ংকর দৃশ্যের সাথে কিন্তু তিনি একটি মতবিরোধপূর্ণ মাসয়ালায় নিমগ্ন আছেন। এমন বুদ্ধিমান ও একচিত্ত ব্যক্তি কে মানুষ কেন হিংস্র প্রাণী হত মোহাব্বত না করে থাকতে পারে না। নিশ্চয় আল্লাহর বাঘেরা কখনো ভীত হয় না। যে অন্তরকে বিজয় করে নেয় সেই মূলত বিজয়ী।
(কিতাবো কি দরসগাহ মে, পৃষ্ঠা-৪৪)