শিশুদের শিক্ষা- দীক্ষা

অনুবাদ: আসিফ আহমাদ

আজকে যারা যুবক কিছুদিন পূর্বেই তারা ছিল শিশু-কিশোর। যারা আজ বৃদ্ধ এরা তাদেরই সন্তান। এরা তাদের শৈশব কৈশোর অতিক্রম করে আজ যৌবনে পদার্পণ করেছে। এভাবেই এই সিলসিলা চলে আসছে। তাই এদের শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
বুনিয়াদিভাবে তাদের প্রতি সহানুভূতি, তাদের পড়াশোনা এবং তাদের সংশোধনের পদ্ধতির দিকে লক্ষ রাখা অতীব জরুরী। যাতে তাদের ভিত্তি মজবুত হয়ে যৌবনে সঠিক রাস্তায় অবিচল থাকতে পারে।
কেননা শিশু বয়সে সঠিক প্রতিপালন যৌবনে সঠিক রাস্তায় অবিচলতার জন্য জরুরি। যৌবনের শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে এটাই উত্তম পদ্ধতি। নতুবা সে তার অমূল্য সম্পদ নষ্ট করবে। নিজের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবে।
শৈশবেই শিশুদের তরবিয়ত যৌবনে সঠিক রাস্তায় চলার উত্তম পাথেয়। তাই ইসলাম তরবিয়ত ও পরিচর্যার সঠিক সময়ের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। শৈশবে ভুল পথে পদচারণা যৌবন ও বৃদ্ধ বয়সে পেরেশানি ও বিপদের কারণ হয়। এজন্য দেখা যায় যে, শৈশবের এই ভুল পদচারণার পরে যৌবনে ইসলাহ বা সংশোধন একেবারেই কঠিন হয়ে পড়ে। অথবা অনেক বেশি মেহনত মুজাহাদা করতে হয়।

গুরুত্বের সাথে আমাদের এ কথা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, ইসলামী তরবিয়ত অথবা দীক্ষার মূল তিনটি ক্ষেত্র আছে। ১/ঘর, ২/পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং ৩/মাদরাসা বা শিক্ষালয়।

এই তিনটি ক্ষেত্রেই যদি সঠিক তরবিয়ত নিশ্চিত করা যায়, তাহলে পিতা-মাতা পরিবেশ ও শিক্ষালয় যে অংকুরটি সঠিকভাবে বড় করতে নিজেদের মেধা শ্রম ও সময় ব্যয় করেছেন তা একসময় ফুলে-ফলে সুশোভিত এক মহীরুহে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।

সামনে এই বিষয়টিকেই আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

           পিতা-মাতার দায়িত্ব

সন্তান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মা-বাবার জন্য একটি উপহার। মানুষের উচিত এই উপহার প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এর জন্য আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা। কেননা, সন্তান মানুষের জন্য উত্তম পুঁজি।
বিবাহর পর থেকেই একটি দম্পতি সন্তানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আপন শিশুর দিকে তাকিয়ে চোখ শীতল করতে ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করে। যদি কখনো সন্তান হতে দেরি হয় তাহলে প্রচন্ড পেরেশান হয়। সন্তান লাভের আশায় দরজায় দরজায় কড়া নাড়তে থাকে। আল্লাহর দরবারে প্রবল আশা নিয়ে কান্নাকাটি করে। পৃথিবীর সব দেশের সব রঙের মানুষের ভিতরে এই স্বভাব বিদ্যমান। এটি আল্লাহ তাআলার একটি বড় কুদরত।
এ কারণেই হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ও সন্তান প্রাপ্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে তার ঘটনা এভাবে বিবৃত হয়েছে যে, “আমি আমার বর আমার চাচাতো ভাইদের ব্যাপারে শঙ্কা বোধ করছি (আমার চাচাতো ভাইয়েরা ও জ্ঞান-গরিমা ও তাকওয়া পরহেজগারিতে এ পর্যায়ের নয় যে তারা আমার মিশন অব্যাহত রাখবে) এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং আপনি আপনার নিকট থেকে আমাকে এমন এক উত্তরাধিকারী দান করুন-যে আমারও উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুব আলাইহিস সালামের উত্তরাধিকারীও লাভ করবে। হে আমার প্রতিপালক! তাকে এমন বানান যে (সে আপনার নিজেরও )সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হবে। (মারয়াম-৫-৬)

সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য উপহার। এ ব্যাপারে কুরআনে আরো বলা হয়েছে যে,”আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহর। আল্লাহ তা’আলা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা মেয়ে সন্তান দান করেন যাকে ইচ্ছা ছেলে সন্তান দান করেন। আবার কাউকে উভয়টি দেন। অথবা বঞ্চিত করেন উভয়টি থেকে।
মানুষের উপর সন্তানের কারণে এক বিশাল প্রভাব পড়ে। এজন্যই আমরা দেখি,যখন কাউকে তার সন্তান হওয়ার খবর দেওয়া হয় তার মন খুশিতে নেচে ওঠে। সবার থেকে মোবারকবাদ পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। কেননা আজকের এই শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। মা-বাবার ভরসা, উম্মতের সম্পদ। এজন্য বাবা মা প্রবল আশা করে যে তাদের সন্তান যেন দুনিয়ায় সব প্রশংসার উপযুক্ত হয়।

সন্তান মা-বাবার নিকট আমানত

          

সন্তান আল্লাহ তায়ালার দান। মা-বাবার শক্তি নেই যে তারা আল্লাহর হুকুম ছাড়া সন্তান লাভ করবে। সুতরাং এই সন্তান তাদের কাছে আমানত। তাই আমানতদাতা যদি চান তাহলে তাঁর আমানত ফিরিয়ে নিতে পারেন, কতবার সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ সময়ের জন্য মা-বাবার কাছে রেখে দিতে পারেন।
এ কারণে এই আমানতের হেফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী এবং সন্তানের জন্য বাবা মায়ের ওপর হক বা প্রাপ্য অধিকার।
সুতরাং শিশু যখন বড় হওয়া শুরু করবে তখন বাবা-মায়ের উপর আবশ্যক তার উত্তম প্রতিপালন করা, তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা, এবং ইসলামের প্রতি তার মনোযোগ নিবদ্ধ করা। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, يوصيكم الله في اولادكم
অর্থাৎ, “আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে তোমাদেরকে ওসিয়ত করছেন।”

পিতা মাতার উপর সন্তানের তরবিয়তের আবশ্যিকতা

আমরা জানি, শিশুদের জন্ম ফিতরতে ইসলাম তথা সঠিক দ্বীনি স্বভাবের উপর হয়ে থাকে। শিশুদের যখন বুঝ হওয়া শুরু হয়, তখন তারা নিজেকে মা-বাবার মাঝে আবিষ্কার করে। তারা দেখে, বাবা মা তার সকল প্রয়োজন পূরণ করার জন্য সচেষ্ট। এজন্য তারা মা-বাবা নিজের সবকিছু ভাবে। যেকোনো প্রয়োজনে তাদের দিকেই মনোনিবেশ করে।
আমরা লক্ষ্য করি, শিশুদের মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়। আর এর উত্তরের জন্য তারা মা-বাবারই শরণাপন্ন হয়। তাদের উত্তরে সন্তুষ্ট হয় এবং মেনে নেয়, তাদের কাছ থেকে শোনা ভালো মন্দ সব কথা গ্রহণ করে নেয়।
শিশুদের আকল হয় নরম মোমের মত। বাবা-মা যেভাবে ইচ্ছা একে গড়ে নিতে পারে। আর তাদের মনে হয় সাদা শ্লেটের মত-সেখানে যা ইচ্ছা লিখে ফেলা যায়।
শিশুদের জন্য এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টাতে শিশুরা পিতা-মাতার অনুকরণ অনুসরণ করতে শুরু করে।
তাই এই সময় থেকেই শিশুদের তরবিয়ত করা এবং শিষ্টাচার শেখানোর গুরুদায়িত্ব মা-বাবার উপর অর্পিত হয়।
এ সময় থেকেই তারা শিশুকে ভালো-মন্দের পার্থক্য শেখাবে। তাকে বিভিন্ন বিষয়ে হুশিয়ার করবে। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়সমূহ তাকে জানাবে।
মা বাবার উপর এটি অনেক বড় একটি গুরু দায়িত্ব। কারণ, দুনিয়া আখেরাতে এই তরবিয়তের উপরই ফলাফল আসবে।
পরিপূর্ণ ঈমান, সঠিক আক্বীদা, ইসলামী আদব, উত্তম চরিত্র, শরীয়তের মাসআলা ও আহকাম শিখানোর মাধ্যমেই মা বাবা মা বাবা সম্মান ও সফলতা লাভ করতে পারেন।
কারণ আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ। আর শিশুদের বাগডোর তো মা বাবার হাতেই।চাইলে তারা ভালো কিছু শিক্ষা দিতে পারেন অথবা শিশুর প্রতি অমনোযোগী হয়ে তার ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলতে পারেন। মনে রাখতে হবে, একদিন আল্লাহর সামনে অবশ্যই আমাদের দাঁড়াতে হবে। এবং সেদিন এই জিম্মাদারির হিসাব আমাদের দিতে হবে।

চলবে, ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply