আনট্রোপলজি অফ জিউস (বুক রিভিউ)

বইয়ের নাম : আনট্রোপলজি অফ জিউস / ইহুদি জাতির নৃতত্ত্ব (মূল বই আরবিতে : اليهود أنثروبولوجيا )
লেখক : জামাল হামাদান
প্রকাশনা : দারুল হেলাল ( ফেব্রুয়ারী , ১৯৯৬)
পৃষ্ঠা : ২৫০ ( ভূমিকা + মূল বই + সংযোজন)
ডাওনলোড লিংক : https://foulabook.com/ar/book/%D8%A7%D9%84%D9%8A%D9%87%D9%88%D8%AF-%D8%A3%D9%86%D8%AB%D8%B1%D9%88%D8%A8%D9%88%D9%84%D9%88%D8%AC%D9%8A%D9%8B%D8%A7-pdf

• লেখক পরিচিত
জামাল মাহমুদ সালেহ হামাদান। বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ ভুগোলবিদ। জন্ম ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯২৮ খ্রি. মিসরের “কালয়ুবিয়্যাহ” জেলায়। তাঁর পূর্বপুরুষ হামাদান বংশীয়, যারা ইসলামের বিজয় চলাকালে মিসরে বসবাস শুরু করেন। তিনি “কুল্লিয়্যাতে আদাব” কায়রো থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভূগোল বিষয়ে ডিগ্রি নেন। পরে সেখানেই অধ্যাপনার নিযুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে “কুল্লিয়্যাহ” পক্ষ থেকে ইংল্যান্ডের রিড্যান্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়ার জন্য প্রেরিত হন। ১৯৫৩ তা সম্পন্ন হয়। পরে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুষদে ভূগোলের প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে সহকারী অধ্যাপকের পদে উন্নীত হন। তখনই ভূগোলত্বত্ত্বের উপর সেরা সেরা গ্রন্থ রচনা করেন। বিভিন্ন লিখনি কর্মের জন্য পুরস্কারও পান।
লেখালেখির ময়দানে জামালের ২৯ টি গ্রন্থ, ৭৯টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ। তার মাঝে অন্যতম “শখসিয়্যাতে মিসর… দিরাসা ফি আবকারিয়্যাতিল মাকান” (স্থানভেদে মিসর-বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ), আল-আলামুল ইসলামিয়্যিল মুআসার (সমকালীন মুসলিম বিশ্ব) ইত্যাদি। এছাড়া বক্ষমান গ্রন্থও বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়।
১৭ এপ্রিল, ১৯৯৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃতদেহের নিম্নাংশ আগ্নিভষ্ম অবস্থায় পাওয়া যায়। সকলের ধারণা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু চিকিৎসক ইউছুফ জুনদির মতে মৃত্যুর কারণ অগ্নিকাণ্ড ছিলোনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে মৃত্যুকালে তার থেকে স্বরচিত বিভিন্ন গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সরিয়ে ফেলা হয়, যেগুলোর রচনাকর্ম প্রায় শেষ হয়ে আসছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ইহুদি ও জায়নবাদ সম্পর্কিত বই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভষ্মকৃত কোন বই দেখা যায়না। এর দ্বারা বুঝা যায়, বই সরানোর কাজ অন্য কারো দ্বারা হয়। তাছাড়া তার মৃত্যুর সঠিক বিবরণ আজ পর্যন্তও উদঘাটন হয়নি, কেউ জানেনা ইহুদি সম্পর্কিত বইয়ের পাণ্ডুলিপি কোথায়। তবে আমিন হুয়াইদির দৃড়ভাবে বলেন, তার মৃত্যকার্যে ইসরায়েলি সংঘ মোসাদের হাত রয়েছে। ( সূত্র : উইকিপিডিয়া)
• বই পরিচিত
জামাল হামাদান এ বইতে বর্তমানে ফিলিস্তিন-জবরদখলকারী ইহুদিদের আদিমুল আলোচনা করেন — যারা তাকে নিজদের পিতৃভূমি বলে দাবি করে। তিনি ঐতিহাসিক প্রমাণাদির মাধ্যমে সাব্যস্ত করেন যে, বর্তমানের ইজরায়েলের ইহুদিরা সে ইহুদি নয়, মসিহের জন্মের কয়েক বছর পূর্বে ফিলিস্তিন ত্যাগ করে। বরং এদের বংশধারা শুরু হয়েছে তাতার জাতিগোষ্ঠী থেকে, যারা কাযভিন সাগর ও ব্ল্যাক সী’র মাঝামাজিতে বাস করত। খ্রিষ্টীয় আট শতকে তারা ইহুদিজাত হয়।
উপরোক্ত গ্রন্থে লেখক ইহুদি জাতির আলোচনার সাথে সাথে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে তাদের সম্পৃক্ততার আলোচনাও করেন। যে নৃতত্বের উপর ভিত্তি করে বর্তমানের ইহুদিরা ফিলিস্তিনকে নিজের আবাসভূমি দাবি করন, নৃতাত্ত্বিক ভাবেই তিনি তাদের এ দাবীকে আলীক-অসার সাব্যস্ত করেন। এছাড়া প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আর্থার কোষ্টলার ইহুদি জাতির এ সত্য-বাস্তবতা উদঘাটন করেন। তাছাড়া গ্রন্থটি যেহেতু নৃতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে, তিনি গাঠনিক আকৃতি নিয়েও আলোচনা হয়। তাতে থাকে প্রকৃত ইহুদি জাতির চামড়ার রং, চুলের ধরণ, চোখের আকৃতি সহ আঙ্গিক সবকিছু। যার মাধ্যমে আরো দৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত হয় যে, বর্তমানরা মূল ইহুদি নয় ,বরং কনভার্ট ইহুদি।
তাছাড়া বইয়ের শেষে সংযোজনা করেন আরো এক অধ্যায় , যাতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ইহুদিদের বিভিন্ন নির্বাসন-কাহিনী আনেন। যাতে সাব্যস্ত হয় যে, ফিলিস্তিন কখনো ইহুদিদের মূল রাজনৈতিক গন্তব্য ছিলোনা। নাৎসি বাহিনীর ধরপাকড় থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে তাদের সম্মুখে আমেরিকা ও ইউরোপের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন ফিলিস্তিনকে তারা বেছে নেয় পেট-পিঠ বাচানোর জন্য। তাছাড়া আরো সুস্পষ্ট করেন যে, ইহুদিদের বর্তমানের এ শক্তি অর্জনের পিছনে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত রয়েছে।
সবিশেষে, বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে বইটি অনন্য, জ্ঞান-কৌতুহলী পাঠকদের তেষ্টা মেটাবে। বাংলা ভাষায় বইটির ব্যাপারে প্রকাশকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

Leave a Reply