মাওলানা মুছাইয়্যিব আহমাদ
সালাম একটি আরবি শব্দ। আবার আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামের মধ্যে অন্যতম একটি নাম আসসালাম (السلام) । সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। যে শব্দটি কুরআনে আল্লাহ তাআলা বহুবার ব্যবহার করেছেন। যেমন سلام علي إبراهيم – سلام علي موسى و هارون -سلام علي إلياسين. ইত্যাদি ।
এবং এক মুসলমান ভাই অপর মুসলমান ভাইয়ের সহিত সাক্ষাত্কালে সর্বপ্রথম যে বাক্যটি জবান দ্বারা অধিকতর উচ্চারিত হয় তাহলো আসসালামু আলাইকুম(السلام عليكم) ।
সুতরাং আমরা আজ সালাম নিয়ে বিস্তারিত জানব( ইনশাআল্লাহ)।
●সালাম এর সূচনা ।
☆আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ইরশাদ করেন যে,তিনি বলেন আল্লাহ তাআলা জান্নাতে আদম আলাইহিস সালামকে তার অবয়বে সৃষ্টি করার পরে বলেন , হে আদম! তুমি যাও এবং ওই বসে থাকা ফেরেশতাদের দলকে সালাম প্রদান করো।আর তুমি ভালোভাবে শ্রবণ করবে যে তারা তোমার প্রতি উত্তরে কি বলে, কেননা পরবর্তীতে তাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির অভিবাদন। অতঃপর আদম আলাইহিস সালাম ফেরেশতাদের নিকটে গিয়ে আসসালামু আলাইকুম বললেন। প্রতিউত্তরে ফেরেশতাগণ বলেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং: ৬২২৭)
তাহলে হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, সালাম এর সূচনা সর্বপ্রথম জান্নাতে আল্লাহ্ তাআলার হুকুমে আদম আলাইহিস সালাম ও ফেরেশতাদের মাঝে সংগঠিত হয় ।
●আমরা সালাম কিভাবে দেব?
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন
واذاحييتم بتحيه فحيوا باحسن منها او ردوها.( سوره النساء: ٨٦)
অর্থ,: যখন কেউ তোমাদেরকে সালাম করে তখন তোমরা তাকে তদপেক্ষাও উত্তম পন্থায় সালাম দিও, কিংবা ( অন্ততপক্ষে) সেই শব্দেই তার জবাব দিও। (সূরা নিসা, আয়াত নং: ৮৬)
সারকথা হলো কোন ব্যক্তি যে শব্দে সালাম দিয়েছে, উত্তম হচ্ছে তাকে তদপেক্ষা আরো ভালো শব্দে জবাব দেওয়া। যেমন সে যদি বলে থাকে ”আসসালামু আলাইকুম” তবে জবাবে বলা চাই ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।
আর যদি কেউ বলে ”আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” তাহলে তার জবাবে বলা চাই ”ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ”। তবে হুবুহু তার ঐ শব্দেই যদি জবাব দেওয়া হয় সেটাও বৈধ হবে।
উল্লেখ্য যে,সালাম প্রদানকারী যেন ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ থেকে বাড়িয়ে না বলে ।যেন সালামের জবাব দাতা উত্তম শব্দ দ্বারা জবাব দিতে পারে। কেননা, সালাম এর শব্দ ‘ওয়া বারাকাতুল্লাহ’ পর্যন্তই সমাপ্ত ।এর বেশি হাদিসে বর্ণিত নেই।
●সালামের গুরুত্ব::
সালাম আদান- প্রদানের গুরুত্ব অপরিসীম, যা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝা যায়।
সুতরাং সেখান থেকে কয়েকটি হাদীস আমরা দেখব।
☆১: একটি হাদীসে বারা ইবনে আযেব রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি জিনিস পালনের হুকুম করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো ‘বেশি বেশি সালাম প্রচার ও প্রসার করা। (বুখারি শরিফ,হাদিস নং: ৬২৩৫)
☆২: অপর হাদিসে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিচিত অপরিচিত সকল ব্যক্তিকে সালাম আদান প্রদান করা ইসলামের উত্তম কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।( বুখারী শরীফ, হাদিস নং: ৬২৩৬)
☆৩: অন্য একটি হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন তোমরা জান্নাতে ঐ সময় পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হও ।এবং তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার ওই সময় পর্যন্ত হতে পারবে না ,যতক্ষণ না তোমাদের মাঝে ভালোবাসা-মুহাব্বত সৃষ্টি হয়ে যায় । অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজ বলে দেবো, যার দ্বারা তোমাদের মাঝে ভালোবাসা-মুহাব্বত সৃষ্টি হয়ে যাবে । সাহাবাগণ বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি বলে দিন ।তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, তোমরা একে অপরকে বেশি বেশি সালাম দিতে থাক, তাহলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা-মহব্বত সৃষ্টি হয়ে যাবে। (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং: ৯৩)
●সালামের ফজিলত
সালামের দ্বারা তো পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ,ভালোবাসা, মুহাব্বত তৈরি হয়েই যায় ।
পাশাপাশি হাদিস শরীফ এ বর্ণিত আছে যে
البادئ بالسلام بريء من الكبر
অর্থ: আগে সালাম প্রদানকারী অহংকার থেকে মুক্ত । (মেশকাত শরীফ, হাদিস নং: ৪৬৬৬)
●আমাদের করণীয় হলো, আমরা পরস্পরের মাঝে বেশি থেকে বেশি সঠিক ভাবে সালামের আদানপ্রদান করবো।
وما توفيقي إلا بالله …..