‘কা’ব বিন আজরা বলেন, একবার এক ব্যক্তি রাসূলের ﷺ পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন সাহাবীরা কর্মব্যস্ত এবং কঠোর পরিশ্রম করছেন। তারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের এ কাজ যদি আল্লাহর পথে বলে পরিগণিত হতো? তখন রাসূল ﷺ বললেন- ‘কেউ যদি আপন ছোট্টছোট্ট বাচ্চাদের জন্য কাজে বের হয় তবে সে আল্লাহর পথেই আছে, এভাবে সে যদি তার বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য কাজে বের হয় তবে সেও আল্লাহরই পথে থাকে, একইভাবে সে যদি নিজের জন্যও অন্যের কাছে চাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকতে কাজে বের হয় তবে সেও আল্লাহর পথেই আছে। কিন্তু সে যদি লৌকিকতা কিংবা দম্ভ-প্রতিযোগিতার জন্য (সম্পদার্জনের উদ্দেশ্যে) কাজে বের হয় তবে সে শাইতানের পথে বের হল।’১’
এই অল্প সেন্টেন্স এবং সংক্ষিপ্ত ওয়ার্ডসে, মহানবী ﷺ বহু ভলিউমের বই এবং বিপুল সাহিত্যে কাজের ভেল্যু সম্পর্কে যা বলা যেতে পারে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে দিয়েছেন। এখানে মহানবী ﷺ খুব উচ্চ কিছু রোল এস্টাবলিশ করেন। কেননা প্রতিটি কাজ কেবল নিজ উদ্দেশ্য, অনুপ্রেরণা এবং মোটিভেশনস থেকে ভেল্যু অর্জন করে। তার সাইজ যাই হোক না কেন।
নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ ﷺ, যার স্বভাবই ছিল ইবাদাত ও ধার্মিকতা এবং যিনি এমন এক দ্বীনের ফ্লাগ ক্যারি করেছিলেন যা বিশ্বকে কেবল পরকালের জন্য উত্তরণ হিসাবে জানে, তিনিই স্বয়ং কাজে যত্নবান ছিলেন। এমনকি কাজের প্রতি তিনি এমন অভূত সম্মান প্রদর্শন করেছেন যা এটিকে ইবাদাত, ধার্মিকতা হিশেবে গণ্য করে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর পথে ঘনিষ্ঠ করে তোলে।
অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ কাজ পছন্দ করতেন এবং তার উম্মাহকে তাতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বেকারত্ব ও লেজিনেস ঘৃণা করতেন এবং তার উম্মাহকে এতে সতর্ক করেছিলেন; তার উম্মাহর লোকদেরকে হাতের আর্নিং থেকে খেতে উৎসাহ দিয়েছেন। বরংচ বান্দা যেসব উপার্জন থেকে খায় তার মধ্যে এটিকে সর্বোত্তম বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন- ‘হাতের ওয়ার্ক থেকে খাওয়ার চেয়ে ভালো খাবার কেউ কখনো খায়নি। আর নবী দাউদ আলাহিস সালামও হাতের ওয়ার্ক থেকে খেতেন।’২’
সম্মান ও মর্যাদার এ এক থিন প্যাটার্ন যে আপনি আপনার হাতের কর্ম থেকে খাবেন।
কাজের এমন মিনিংয়েরই তাগিদ তিনি ﷺ অন্যত্র দিয়ে বলেন- ‘তোমাদের কেউ কিছু দড়ির মাধ্যমে ফায়ারঊডের বাণ্ডিল নিয়ে তা বিক্রি করে, ‘ফলে আল্লাহ তাকে এজন্যে অন্যের মুখাপেক্ষি থেকে রক্ষা করেন।’ (বিনিময়ের দ্বারা আহার করা) মানুষের দ্বারে ভিক্ষা করা থেকে উত্তম। সে যখন চায় তখন তাকে দেয়া হয় নতুবা তাড়িয়ে দেয়া হয়।’৩’
এটি এমন এক কাজ অনেকের কাছে হয়তো তুচ্ছ লাগবে, বা কেউ এমন কাজ করতে চাইবে না। কিন্তু রাইট ব্যালেন্সে এটি আত্মার পবিত্রতা, মুখ বাঁচানো এবং অন্যের দ্বারস্থ হওয়া বা হাত পাতার সংস্পর্শ থেকে নিজেকে সুরক্ষা করার জন্য এটি একটি গ্রেট ওয়ার্ক।
উম্মতে ইসলামকে কাজের প্রতি গুরুত্বারূপের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যতটুকু সতর্ক করা হয়েছে অন্য কোন উম্মাহকে ততটুকু করা হয়নি। আল্লাহ যমীনকে আমাদের অনুগত করে বানিয়েছেন যাতে আমরা চেষ্টা ও শ্রমের মাধ্যমে তার ধনভাণ্ডার থেকে উপকৃত হই। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্যে যমীনকে অনুগত করেছেন, অতএব তোমরা তার বুকে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক আহরণ করে খাও। তারই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।’৪’
এভাবে তিনি সমুদ্রকেও অনুগত করেছেন ফুড, জুয়েলারি ও জলযান চলাচলসহ হরেক কল্যাণ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যে। তাছাড়া এতে কাজ করা এবং বিভিন্ন উপকার লাভের কনসেপ্টতো রইলই। আল্লাহ বলেন- ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাংস খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযান সমূহকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার কর।’৫’
নবী কারীম ﷺ মানবিক ব্যবহারিক প্রয়াসকে বিশ্বের যাবতীয় উপহার ও মজুরীর চেয়ে বড় ও উন্নত কিছুর দিকে উন্নীত করেছেন যখন তিনি এটাকে পরকালীন ঐ ফাইনাল মজুরীর সাথে যুক্ত করেছেন যা স্থায়ী হবে এবং বিনষ্ট হবেনা। তিনি ﷺ বলেন-‘যে তার শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে হাতের কাজ শেষ করে বাড়ী ফেরে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে৷’৬’ হালাল ওয়ার্ক, ইভেন কঠোর পরিশ্রম হলেও লোকদের কাছে চাওয়া বা হাত পাতার চেয়ে শরিআহর দৃষ্টিতে তা বেটার। রাসূলের ﷺ এক সাহাবী কাবীসা ইবনু মুখারিক আল হিলালী রাযি. তার এবং রাসূলের ﷺ মাঝে যে ঘটনা ঘটেছিল তার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন-‘আমি অন্যের দায়ভার বহন করতে গিয়ে ঋণী হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাওয়ার জন্য তার কাছে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নিকট চ্যারিটি আসা পর্যন্ত তুমি এখানে অপেক্ষা কর, আমি তা থেকে তোমাকে কিছু দিতে বলে দিব। তারপর তিনি বললেন, হে কাবীসা! তিন ব্যাক্তি ছাড়া কারো সাওয়াল করা বৈধ নয়।
১. ঐ ব্যাক্তি, যে কারো দায়ভার বহন করে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে, তার ঋণ পরিশোধের পরিমাণ সাওয়াল করা, তারপর সে বিরত থাকবে।
২. ঐ ব্যাক্তি, বিপর্যয় যার ধন সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে, তার জীবিকা নির্বাহের কোন উপায় না পাওয়া পর্যন্ত।
৩. আর যে ব্যাক্তি ক্ষুধাক্লিষ্ট এবং তার গোত্রের তিনজন লোক তার সম্পর্কে এ সাক্ষ্য দেয় যে, সে ব্যাক্তি অবশ্যই ক্ষুধাক্লিষ্ট; তার জীবিকা নির্বাহের কোন উপায় না পাওয়া পর্যন্ত সাওয়াল করা বৈধ। হে কাবীসা! এ তিনজন ছাড়া যে ভিক্ষা করে খায় সে হারাম খায়।’৭’
কিছু লোক ভিক্ষা বা চাওয়াকে ইজি করে দেখেন এবং কাজের কষ্ট সহ্য করার চেয়ে এটিকে ভাল বলে বিবেচনা করে থাকেন। আর তারা একধরনের উদাসীনতা এবং আরও বেশি লোকের অর্থ ধারণের আকাঙ্ক্ষায় ভুগতে থাকে। আমরা এখানে রাসূলুল্লাহকে ﷺ পাই যে, তিনি বিষয়টিকে কোন কারণ এবং প্রকার ছাড়াই ঘৃণা করেন যা তাকে এক্সেপ্ট করতে পারে এবং বলেন: ‘যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে লোকদের কাছে ভিক্ষা করে, প্রকৃতপক্ষে সে জ্বলন্ত অঙ্গার ভিক্ষা করে। অতএব সে তার ভিক্ষা মেগে বেড়ানো বাড়াতেও পারে বা কমাতেও পারে।’৮’
তিনি মানুষের থেকে অমুখাপেক্ষীতাকে গৌরব বা সম্মানের বিষয় হিশেবে সাভ্যস্থ করেন এবং তিনি মুমিন বান্দা সম্পর্কে অবহিত করে বলেন: ‘আর তার সম্মান বা মর্যাদা লোকদের থেকে অমুখাপেক্ষী হওয়ার মাঝে নিহিত রয়েছে।’
যে ব্যক্তিকে শূন্যতা, বেকারত্ব এবং লেজিনেস প্রভাবিত করে সে শেষ পর্যন্ত তার সামনে লোকদের কাছে চাওয়া এবং ভিক্ষা করা ছাড়া কোন পথ খুঁজে পায় না। কিন্তু যে পরিশ্রমী এবং পরিশ্রমের কাজ করে এবং পরিশ্রমের পথ গ্রহণ করে, সে তার কাজের ফলস্বরূপ সততা, মর্যাদা ও মানুষের থেকে অমুখাপেক্ষীতাসহ আল্লাহর কাছ থেকে প্রত্যাশিত পুরষ্কার ও প্রতিদান লাভ করবে। যখন তার এই কাজে নিয়াত সঠিক থাকবে। হাকীম ইবনু হিযাম রাদ্বি. থেকে, তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন যে, ‘উপরের হাতটি নীচের হাতের চেয়ে উত্তম।’৯’
উপরের হাত দ্বারা দাতা এবং নীচের হাত দ্বারা গ্রহীতা বা ভিক্ষুক উদ্দেশ্য।
ইনি আনাস ইবনু মালিক রাদ্বি. তিনি বলেন- সাহাবীদের একজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে তার কাছে কিছু দেয়ার জন্য চাইলেন। তখন তিনি ﷺ বললেন: ‘তোমার ঘরে কি কিছু আছে?’ তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমাদের একটি মোটা পোশাক আছে যার কিছু আমরা পরি এবং বাকি কিছু আমাদের নীচে বিছিয়ে দেই, তাছাড়া আমাদের আরো একটি পানপাত্র আছে যা দিয়ে আমরা পানি পান করি। তিনি ﷺ বললেন: ‘এগুলি আমার কাছে নিয়ে এসো।’ তিনি সেগুলো তার সাথে নিয়ে আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং বললেন: ‘এই দু’টি কে কিনবে?’ এক ব্যক্তি বলল: আমি এগুলো এক দিরহামে হলে নিচ্ছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘আর কে আছো যে এক দিরহাম থেকে বেশি ধরে নেবে? এরকম দুই বা তিন বার বলার পর- একজন বললেন: আমি সেগুলি দুটি দিরহামে নিবো। নবীজি ﷺ তাকে সেদুটি দিয়ে দু’ দিরহাম নিলেন এবং আনসারী সাহাবীকে দিয়ে বললেন- ‘এক দিরহাম দিয়ে খাবার কিনে ঘরে দাও, ওপর দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে আসো।’ সাহাবী কুঠার কিনে রাসূলের ﷺ কাছে এনে দিলেন, রাসূল ﷺ নিজ হাতে সেটির হাতল স্থাপন করে দিয়ে বললেন- ‘যাও কাঠ কেটে বিক্রি কোরো, আর পনেরো দিনের মাঝে যেনো তোমাকে না দেখি। সাহাবী গিয়ে অমনই করে তার কাছে আসলেন। ইতিমধ্যে দশ দিরহামের মালিক হয়েছেন। এগুলো দিয়ে কিছু খাবার ও বস্ত্র কিনলেন। তখন রাসূল ﷺ তাকে বললেন- ‘ভিক্ষা করে কিয়ামাতে চেহারায় ‘জোক’ নিয়ে দাঁড়ানো থেকে এটা তোমার জন্যে উত্তম।’১০’
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি চেয়ে বেড়ায়, কিয়ামাতের দিন তার ফেইসে এক টুকরা গোশতও থাকবেনা।’১১’
বান্দাকে পরিশ্রম করার প্রয়োজন হয়, এবং আল্লাহ সুবহানাহু তাকে কষ্ট ও শ্রমের কারণে অল্পতেই বারাকাহ দেন ফলে তা তার জন্য যথেষ্ট হয় এবং প্রচুর পরিমাণে বর্ধিত হয়।
আদর্শ রাসূল ﷺ :
রাসূল ﷺ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুপম আদর্শ, প্রকৃষ্ট এক্সাম্পল, নির্দ্বিধায় অনুকরণীয়। আমরা যখন মহানবীকে ﷺ মসজিদে নববী নির্মাণে স্বয়ং কন্সট্রাকশনে দেখি তখন তার এই গ্রেটনেস স্পষ্টভাবে প্রস্ফুটিত হয়। তিনি এর বিল্ডিংয়ের কাজ করেন এবং আপন হাতেই পরিশ্রম করেন। পাথর বহনকারীদের সাথে নিজেও পাথর বহন করেছিলেন। তিনি এতে স্বতন্ত্র মর্যাদার ওড়নায় নিজেকে আবৃত করেন নি বা আলাদা বড়ত্বের ভাবও নেন নি। সাহাবায়ে কেরাম যখন তাকে কাজে দেখলেন, হিউমেন লিডারসের মধ্যে যা অতুলনীয় এবং কল্পনাতীত তখন তারা সমস্বরে বলে ওঠলেন:
‘যদি আমরা বসে থাকি আর নবীজি করেন কাজ, তবে এটা আমাদের থেকে হবে মিসলীডিং ওয়ার্ক।’
তেমনিভাবে তিনি আহযাবের যুদ্ধে তার পবিত্র হাতে কুঠার বহন করেছিলেন। খন্দকের গর্ত খননের সময় ডিফ স্টোনস কেটে চূর্ণবিচূর্ণ করেছিলেন। সম্মানিত সাহাবাগণ তার মোবারাক পেটের স্কিনে ধূলিকণা দেখেছিলেন।
আবু হুরাইরা রাদ্বি. থেকে বর্ণিত, রাসূল একবার তার সাহাবীদেরকে বলেছিলেন: ‘আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত প্রায় নবীই মেষপাল চড়িয়েছেন। সাহাবীগণ বললেন: তাহলে আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমিও স্বর্ণমুদ্রা বিনিময়ে মক্কার লোকদের মেষ চড়াতাম/ মক্কার ‘ক্বারারিত্ব’ নামক স্থানে মেষ চড়াতাম।’১২’
সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমও কাজের প্রতি কেয়ারফুল ছিলেন:
সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনাচারে আল্লাহর পথে তাদের স্যটিজফ্যাকশন ও স্ট্রাগল পাঠকালে তাদের ব্যাপক জিহাদ পরিচালনা ও দেশের পর দেশ বিজয়ের আধিক্যেতার জন্যে স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় তারা জিহাদ এবং দেশ জয় ছাড়া অন্যান্য কার্যাবলী থেকে ফ্রী ছিলেন। বাট বাস্তবতা উল্টো। আবু বাকর, উসমানসহ রাদ্বি. অনেক সাহাবী ব্যবসায়ী ছিলেন। আলী বিন আবি তালিব রাদ্বি. শ্রমিক ছিলেন। এভাবে রাসূলের অন্যান্য সাহাবীগণের বিভিন্ন কারখানা ও কারুশিল্প ছিল। নীচে প্রদত্ত এই মডেলটি আমাদের জন্যে বিষয়টি সংক্ষেপে বুঝতে সহজ করবে।
আনাস রাদ্বি. থেকে বর্ণিত, আবদুর রাহমান ইবনু ’আউফ হিজরাত করে মাদীনায় এলে রাসূল ﷺ সা’দ ইবনু রাবী’র সাথে তার ভ্রাতৃসম্পর্ক কায়েম করে দেন। সা’দের দুইজন স্ত্রী ছিলেন। তিনি আবদুর রাহমানকে সকল সম্পদ সমান দু’ভাগে ভাগ করে দিতে চাইলেন। আবদুর রাহমান বললেন, ‘আল্লাহ আপনার পরিজন ও সম্পদের মধ্যে বরকত ও কল্যাণ দান করুন! (ভাই, এসব কোন কিছুর প্রয়োজন আমার নেই।) আমাকে শুধু বাজারের পথটি দেখিয়ে দিন।’
আব্দুর রহমান রাদ্বি. এক স্থান থেকে কিছু ঘি ও পনির খরিদ করে বাজারে যান, এবং তা দ্বারা লাভবান হন।
কয়েক দিন পর তার কাপড়ে হলুদের দাগ দেখে রাসূল সা. জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি বিয়ে করেছ?’ বললেন, ‘হ্যাঁ’। জিজ্ঞেস করলেন কাকে?’ তিনি বললেন, ‘এক আনসারী মহিলাকে।’ রাসূল ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, ‘মোহর কত নির্ধারণ করেছ?’ তিনি বললেন, ‘কিছু সোনা।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওয়ালিমা করে নাও।’১৩’
আমরা কেবলমাত্র কোন কাজ করার প্রয়োজনীয়তাটুকুই বুঝাতে চাচ্ছি না, বরংচ সেই কাজকে পূর্ণতা প্রদান করা এবং ভালভাবে করতে হবে। অর্থাৎ শুধু কাজ করলে হবেনা, কাজটি পুরোপুরি ভালভাবে করতে হবে। পৃথিবীর ক্ষেত্রগুলিতে আমাদের আগে যে সকল জাতিগুলোর উত্থান হয়েছিল তারা কাজে কঠোর স্ট্রাগল ও দক্ষতা অর্জন এবং ভালভাবে করা ব্যতীত উত্থিত হয়নি। এভাবে আমরা যদি আমাদের দ্বীনের দিকেও ফিরে তাকাই, আমরা দেখতে পাই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিু ওয়াসাল্লাম কাজ ভালভাবে তার ন্যায্য হক আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ﷺ বলেছেন: ‘নিশ্চয় আল্লাহ এটা পছন্দ করেন যে, তোমাদের কেউ কোন কাজ করলে সে যেন মজবুত ভাবে করে৷’১৪’
কাজে পূর্ণতার অভাব কখনো কখনো বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে এবং ক্ষতিসাধন করতে পারে। শ্রম, চেষ্টা এবং অর্থের অপচয় করতে পারে। কাজে নিপুণতার অভাব প্রত্যাখাত প্রতারণার এক প্রকার হতে পারে। হাদীসে আছে: ‘যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত নয়।’১৫’
আমাদের কাজ করা প্রয়োজন এবং এই কাজকর্মে ভাল উদ্দেশ্য থাকতে হবে যাতে আমরা ইহকালীন এবং পরকালীন পূণ্য অর্জন করতে পারি। আমরা রাসূলের ﷺ এই উক্তিটি দিয়ে শেষ করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যদি কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার উপক্রম হয় এবং কারো কাছে কোন বীজ বা চারা থাকে, আর সে মনে করে যে, কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পুর্বে সে তা রোপন করতে পারবে, তবুও যেন সে তা রোপন করে৷’১৬’
সমস্ত কিছুর উপাস্য আল্লাহর প্রশংসা পাঠ করছি।
উৎস:
(১) (মাজমাউয যাওয়াঈদ ওয়া মানবাউল ফাওয়াঈদ:৪/৩২৫,হাদীস:৭৭০৯. আত তারগীব ওয়াত তারহিব:৩/১০৭)(ত্বাবারানি, সাহীহুত তারগীব,১৬৯২)
(২) (বুখারী, ফাতহুল বারি:৪/৩৫৫, হাদীস:২০৭০-৭৫)
(৩) (সাহীহুল বুখারী:২৩৭৩. ফাতহুল বারি:৫/৪৬. মুয়াত্তা মালিক:৪৭)
(৪) (সূরা আল মূলক,১৫)
(৫) (সূরা আন নাহল,১৪)
(৬) (তাবারানি, মুসান্নাফ;ইবনু আবি, আলবানী রাহি. এটিকে মুনকার বলেছেন)
(৭) (সাহীহ মুসলিম:১০৪৪. সাহীহ আবু দাউদ:১৬৪০. নাসাঈ: ২৫৮০)
(৮) (মুসলিম:১৮৩৯/মুরাআতুল মাফাতিহ,খণ্ড:৬, সাওম:২০৩৮, যাকাত: ১৭৮৭)
(৯) (বুখারী, যাকাত অধ্যায়:১৪২৮/ ইসতিফাফ আনিল মাসয়ালা অধ্যায়:১৪৮২/ কিতাবুল ওসায়া:২৭৫০. মুসলিম, যাকাত অধ্যায়:১০৩৪-৩৫)
(১০) (আওনুল মাবুদ, কিতাবুয যাকাত,বাবু মা তাজুযু ফিহিল মাসয়ালা, ৫/৪০,হাদীস:১৬৪১)
(১১)(বুখারি:১৪১৬,মুসলিম)
(১২) (ফাতহুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী, খণ্ড:৪, ‘রা’য়ূল গানামি আলা কারারিত্ব’ অধ্যায়, হাদীস নং:২১৪৩)
(১৩) (বুখারী,ফাতহুল বারী:৯/১৪০, হাদীস নং:৪৮৭২)
(১৪) (বায়হাক্বি:৪/১৮৬৭. আল জামিউস সাগীর:১৮৫৫. সাহীহুল জামি’:১৮৮০. মু’জাম আওসাত্ব:১/২৭৫. আসসিলসিলাতুস সাহীহাহ:১১১৩. যাখীরাতুল হুফফাজ:১/৩৮৮)
(১৫) (মুসলিম)
(১৬) (আহমাদ:১২৫১২. আল আদাবুল মুফরাদ:১/১৬৮৮. ফায়জুল কাদির:৩/৩০. মুসনাদুল ইমাম আহমাদ:২০/২৯৬. উমদাতুল কারী:১২/১৫৫. হাল নাহনু মুসলিমুন,মুহাম্মাদ ক্বুতুব:১/২৫-২৭. আসসিলসিলাতুস সাহীহাহ:১/৩৮. সনাউল হায়াত:১/৫৬)