রমজানুল মোবারক সংক্ষিপ্ত ফাযায়িল ও মাসায়িল

আসিফ আহমাদ

পবিত্র মাহে রমজান সমাগত। আরবি হিজরী সনের নবম মাস এই রমজান। মাসটির বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে আল্লাহ তাআলা রমজান মাস আমাদের উপর রোজা ফরজ করেছেন।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন: شهر رمضان الذي انزل فيه القران هدى للناس وبينات من الهدى والفرقان فمن شهد منكم الشهر فليصمه ومن كان مريضا او على سفر فعدة من ايام اخر يريد الله بكم اليسر ولا يريد بكم العسر وليتكملوا العدة ولتكبروا الله على ما هداكم ولعلكم تشكرون. অর্থাৎ, “রমজান মাস,যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম (রোজা) পালন করে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে বা সফরে থাকবে, সে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজতা চান কঠিনতা চান না। যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর। এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং শুকরিয়া আদায় কর।(সূরা বাকারা: আয়াত-১৮৫)

রমজানের রোজা সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: من صام رمضان ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (সহিহ বুখারী: হাদিস-৩৭)

রোজার পরিচয়

রোজা একটি ফারসি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে ‘উপবাস’। আরবি ভাষায় এর প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘সাওম’। ইসলামী শরীয়তে রোজা বলে- বিশেষ বৈশিষ্ট্যে বিরত থাকাকে। অর্থাৎ, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ (যৌন তৃপ্তি) থেকে বিরত থাকা।(আত তারীফাত)

• রোজার জন্য নিয়ত করা ফরজ।

• নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে করা জরুরি নয়।মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে।

• মুখে নিয়ত করলেও আরবিতে হওয়া জরুরী নয়।

• সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে যাওয়ার দেড় ঘন্টা পর্ব পর্যন্ত রমজানের রোজার নিয়ত করা যাবে। তবে রাতে নিয়ত করে নেওয়া উত্তম।(বেহেশতী জেওর) সেহরি সেহরি হচ্ছে, শেষ রাতে সুবহে সাদিকের পূর্বে পানাহার করা। রোজা রাখার নিমিত্তে এ খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত। সেহরি খাওয়ার জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। নবীজি (সাঃ) বলেছেন, تسحروا فان في السحور بركة অর্থাৎ, তোমরা সেহরি খাও। কেননা সেহরিতে বরকত আছে। (বুখারি, হাদিস-১৭৮৯)

• বিলম্বে সেহরি খাওয়া উত্তম। খাওয়া আগেভাগে শেষ হলে চা-পানি ইত্যাদি কোন কিছু শেষ সময়ে খেলেও এই ফজিলত পাওয়া যাবে।

• ঘুম বা অন্য কোন কারণে সেহরি খেতে না পারলেও রোজা রাখতে হবে।

• সেহরির সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর কোন কিছুই খাওয়া যাবেনা।

ইফতার

ইফতার হচ্ছে, মাগরিবের সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রোজাদার ব্যক্তির পানাহার করা। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় রোজাদার এক অপার্থিব আনন্দ লাভ করে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের সময় রয়েছে। ১/ইফতারের সময়, ২/আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।(সহিহ মুসলিম, হাদিস-২৫৯৬)

ইফতারের সময়ে রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (১) রোজাদার যখন ইফতার করে, (২) ন্যায় পরায়ণ শাসকের দোয়া, (৩) মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তার (মজলুমের) দোয়া মেঘমালার উপরে তুলে নেন এবং এর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। রব্বুল আলামীন বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো, কিছু বিলম্বে হলেও। (তিরমিজি শরীফ, ৩৫২২)

ইফতারের দোয়া

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ে ইফতার করতেন: اللهم لك صمت وعلى رزقك افطرت (আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওআলা রিজকিকা আফতারতু) অর্থাৎ, হে আল্লাহ আপনার জন্যই আমি রোজা রেখেছিলাম এবং আপনার দেয়া রিযিক থেকেই আমি ইফতার করলাম। (সুনানে আবু দাউদ:২০১১)

এছাড়াও নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার শেষ করে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেন: ذهب الظمأ وابتلت العروق وثبت الأ جر إن ان شاء الله (যাহাবায যমা-উ ওয়াবতাল্লাতিল উরূকু ওয়াছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ) অর্থাৎ, তৃষ্ণা নিবারণ হয়েছে, শিরা-উপশিরা পরিতৃপ্ত হয়েছে, এবং আল্লাহর ইচ্ছায় বিনিময় নির্ধারিত হয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস-২০১০)

তারাবির নামাজ

রমজান মাসে এশার নামাজের পর এশার ওয়াক্তের মধ্যে যে বিশ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ পড়তে হয়, তাকে তারাবির নামাজ বলে। তারাবির নামাজের ব্যাপারে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সওয়াবের আশায় (তারাবির) নামাজে দাঁড়ায়, তার অতীতের সকল (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।(সহিহ বুখারি, হাদিস-১৮৬৯)

• তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

• তারাবীর রাকাত সংখ্যা হচ্ছে বিশ। আট নয়।

• রমজান মাসের তারাবির মধ্যে তারতিব অনুযায়ী একবার কোরআন খতম করা (পড়া বা শোনা) সুন্নত।

• তারাবির নামাজে নাবালেগের পিছনে ইক্তিদা করা সহীহ নয়।

• কোন আয়াত ভুলে গেলে পরবর্তীতে সেটা পড়ে নিতে হবে। অন্যথায় খতম পূর্ণ হবে না।

ফিদয়া

ফিদয়া অর্থ ক্ষতিপূরণ। কোন ব্যক্তি রোজা রাখতে না পারলে বা কাযা আদায় করতে না পারলে যে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় তাকে ফিদয়া বলে। অতি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রোজা রাখতে না পারলে, অথবা এমন দীর্ঘমেয়াদি রোগ হলে যা থেকে সুস্থ হওয়ার কোন আশা থাকে না, এবং রোজা রাখলে ক্ষতির আশঙ্কা হয়,এমন ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া আদায় করার অনুমতি আছে। তবে এমন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অথবা রোগী কখনো যদি পুনরায় রোজা রাখার শক্তি ফিরে পায় তাহলে তাদেরকে রোযা কাযা করতে হবে। এবং সে যে ফিদিয়া দিয়েছিল, তার জন্য সে পৃথক সওয়াব পাবে। • ফিদয়া আদায় করার পূর্বে মৃত্যু নিকটবর্তী হলে ওয়ারিশদের কে তার ফিদিয়া আদায় করার ওসিয়ত করা কর্তব্য।

ইতিকাফ

ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। পরিভাষায় জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সওয়াবের নিয়তে মসজিদে (পুরুষ) বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে (মহিলা) অবস্থান করা। রমজানে ইতিকাফ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তার ওফাত পর্যন্ত এই আমল অব্যাহত ছিল। এরপর তার সহধর্মিনীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন।(সহীহ বুখারী, হাদিস-২০২৬) ইতিকাফের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে ইমাম যুহরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন আমল করতেন আবার তা কখনো ছেড়েও দিতেন। কিন্তু মদীনায় আসার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ইতিকাফ করা ছাড়েননি। অথচ আশ্চর্য! মানুষজন আজকাল ইতিকাফ করা ছেড়ে দিচ্ছে!!(বাদায়েউস সানায়ে,৩/৫) ইতিকাফের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। (১) (পুরুষরা)এমন মসজিদে ইতিকাফ করতে হবে যেখানে নামাজের জামাত হয়।(মহিলাগণ ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করবে), (২) ইতিকাফের নিয়ত করতে হবে। (৩)হায়েজ-নেফাছ এবং জানাবাত থেকে পাক হতে হবে । (বেহেশতী জেওর) রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। অর্থাৎ কোন গ্রাম বা শহরের কোন মহল্লার কেউ যদি এই ইতিকাফ আদায় না করে, তাহলে সবাই সুন্নত তরকের জন্য দায়ী হবে।

• রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতিকাফের সময়।

• শরয়ী প্রয়োজন বা স্বভাবগত প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফের স্থান থেকে বের হলে ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে যায়।

• সহবাসের কারণে ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে যায়। বীর্যপাত হোক বা না হোক। এমনিভাবে চুম্বন আলিঙ্গন ইত্যাদির দ্বারা বীর্যপাত হলেও ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যায়।

• ফরজ গোসল ছাড়া আমরা প্রতিদিন যে গোসল করি, শুধু এরূপ গোসলের উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবেনা।

• ইতিকাফ অবস্থায় চুপচাপ বসে না থেকে দোয়া, জিকির-আযকার, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল থাকা কর্তব্য।

লাইলাতুল কদর

লাইলাতুল কদর হচ্ছে, রমজান মাসের একটি মহিমান্বিত ও সম্মানিত রাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীম নাযিলের সূচনা করেন। এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব হতে পারে, এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।(তাওযিহুল কুরআন) এছাড়াও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে (দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে) এবং সোয়াবের আশায় ইবাদত করে, তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস-৩৫) লাইলাতুল কদরের রাত কবে? পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায়, বিশ রমজানের পর অনির্দিষ্টভাবে যেকোনো বিজোড় রাত লাইলাতুল কদর হতে পারে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বর্ণনা করেন যে,নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন, এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।(বুখারী শরীফ, হাদিস-২০২০) অপর একটি হাদীসে এসেছে, হযরত আবু সাঈদ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবীজী (সাঃ)এর সাথে রমজানের মধ্যে দশকে ইতিকাফ করলাম। তিনি ২০ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে বললেন, “আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তাঁর অনুসন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি ওই রাতে কাদাপানিতে সিজদা করছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূলের সাথে ইতিকাফ করেছে, সে যেন ফিরে আসে। তারপর আমরা সকলে থেকে গেলাম। আমরা আকাশে হালকা মেঘখন্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা গেল এবং এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ থেকে পানি ঝরতে লাগল। নামাজের শুরু হলে আমি আল্লাহর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাদাপানিতে সিজদা করতে দেখলাম। এমনকি আমি তার কপালে পরে কাদার চিহ্ন দেখতে পাই। (সহিহ বুখারী, হাদিস-২০১৬)

লাইলাতুল কদরের আমল

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি জানতে পারি কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে আমি ওই রাতে কোন দোয়াটি পড়বো? তিনি বললেন, তুমি বল- اللهم انك عفوا كريم تحب العفو فاعفوا عني (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি) (অর্থাৎ, হে আল্লাহ তুমি বড় অনুগ্রহশীল ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই পছন্দ করো। তাই আমাকে ক্ষমা করো‌)। জামেউত তিরমিযী, হাদিস-। ) এছাড়াও শেষ দশকে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, জিকির-আজকার ও দান সদকা ইত্যাদি করা যেতে পারে।

সদকাতুল ফিতর

ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় যার নিকট যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকে, তার উপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় আসবাবপত্র ছাড়া অন্যান্য আসবাবপত্র, সৌখিন জিনিসপত্র, খালি বা ভাড়া দেওয়া ঘর(যার উপর জীবিকা নির্ভরশীল নয়), এসব কিছুর মূল্য ধর্তব্য হবে। সদকায়ে ফিতর নিজের পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব। পিতা হলে নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকেও দেয়া ওয়াজিব। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান, স্ত্রী, বাড়ির কাজের লোক, পিতা-মাতার প্রমুখের পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব নয়। সদকাতুল ফিতর পাঁচটি জিনিস দ্বারা দেওয়া যায়। এক সা পরিমাণ খেজুর, কিসমিস, পনির ও যব। অথবা এর সমমূল্যের মুদ্রা। এবং অর্ধ সা গম অথবা এর সমমূল্যের মুদ্রা। এক সা হচ্ছে তিন কেজি চারশো গ্ৰাম(সতর্কতামূলক), এবং অর্ধ সা হচ্ছে- এক কেজি সাড়ে শাতশ গ্রাম। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাযের পূর্বেই সদকাতুল ফিতর দিয়ে দেওয়া উত্তম। নামাজের পূর্বে দিতে না পারলে পরে দিলেও চলবে। রমজানেও সদকাতুল ফিতরা দেওয়া জায়েজ আছে। ‘একজনের ফিতরা একজনকে বা কয়েকজনকে দেওয়া’ উভয়টাই জায়েজ। এমনিভাবে কয়েকজনের ফিতরা একজনকে দেওয়াও দুরস্ত আছে।(বেহেশতী জেওর)

ঈদুল ফিতর

এক মাস রমজানের রোজা পালন করার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। এর প্রবর্তনের ইতিহাস হচ্ছে-হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে দেখেন যে, মদিনাবাসীরা নির্দিষ্ট দুটি দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন,এই দুইটি দিন কিসের? তখন সবাই বলল, জাহিলি যুগে এই দুটি দিনে আমরা খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এই দুইদিনের পরিবর্তে অন্য দুটি দিন দান করেছেন। আর তা হলো ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন।(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-১১৩৪) পরিশেষে আরজ এই যে, আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদের সবাইকে রমজানের যথাযথ কদর করার তৌফিক দান করেন। আমিন। ৮/৯/১৪৪২হি ২০/৪/২০২১ঈ

Leave a Reply