লেখক: মাওলানা তামিম মুনতাসির
নাম ও বংশ পরিচয়
নামঃ উছমান
উপনামঃ আবু আব্দুল্লাহ
উপাধিঃ গণি, যুন নূরাইন
পিতাঃ আফফান
মাতাঃ আরওয়া..(রাসূল সা. এর আপন ফুফাতো বোন ছিলেন)
হযরত উছমান (রাদিঃ) এর বংশ ঊর্ধ্বতন পঞ্চম পুরুষে গিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশের সাথে মিলে যায় ।
জন্ম
হযরত উছমান (রাদি.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মের ছয় বছর পর পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
অবয়ব প্রকৃতি
হযরত উছমান (রাদি:)এর গায়ের রং ছিলো লাল-ফর্সা, গঠন ছিলো মাঝারি এবং নাক ছিল উঁচু। তাঁর গাল ছিল মাংসল।দাতঁগুলি ছিল মেলানো ও উজ্জল এবং স্বর্ণের তার দ্বারা বাধাঁনো।চেহারায় বসন্ত রোগের কিছু দাগ ছিল। তাঁর দাড়ি বেশ লম্বা ও ঘন ছিল। আর অধিকাংশ সময়ই তিনি দাড়িতে মেহেদির খেজাব লাগাতেন। বুক ছিল প্রশস্ত। তিনি কান পর্যন্ত চুল রাখতেন।
ইসলাম গ্রহণ
তিনি প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষদের তালিকায় তিনি ছিলেন চতুর্থ। তাঁর পূর্বে হযরত আবু বকর (রাদি.),হযরত আলী (রাদি.) এবং হযরত যায়েদ বিন হারেছা (রাদি.) ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।আর তিনি হযরত আবু বকর (রাদি.) এর দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলাম গ্রহণ করেন।সেসময় তার বয়স হয়েছিল ৩৪ বছর।
হিজরত
মক্কাতুল মুকাররমা থেকে মুসলমানগণ হিজরত করা আরম্ভ করলে তিনিও তার পরিবারসহ হিজরত করেন। তিনি মোট দুইবার হিজরত করেন।প্রথমবার মক্কা থেকে আবিসিনিয়ায় । দ্বিতীয়বার মদীনা মুনাওরাতে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে এক নতুন সম্পর্ক
মক্কা থেকে হিজরতের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সা. তার দ্বিতীয় কন্যা হযরত রুকাইয়া (রাদি.) এর সাথে হযরত উসমান (রাদি.)এর বিবাহ দেন। হিজরতের সময় হযরত রুকাইয়া (রাদি.)ও তার সাথে ছিলেন। এই বিবাহের মাধ্যমে রাসূল সা. উছমান রা. এর শশুর এবং উছমান রা. রাসুলুল্লাহ সা. এর জামাই হোন। তার সম্মানিতা স্ত্রী হযরত রুকাইয়া (রাদি.) ২য় হিজরতে বদরের যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় নিঃসন্তান অবস্থায় নশ্বর এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
যূন-নূরাইন উপাধিতে ভূষিত হওয়া
৩য় হিজরিতে রাসূলুল্লাহ সা. তার ৩য় কণ্যা হযরত উম্মে কুলছুম (রাদি.)কেও উছমান (রাদি.) এর সাথে বিবাহ দেন। এজন্যই তাকে যূন-নূরাইন উপাধি দেয়া হয়। অর্থাৎ দুই নূর বিশিষ্ট (রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দুই কণ্যার অধিকারী)। এটি একমাত্র তারই বিশেষত্ব ছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একের পর এক ২ কণ্যার সাথে তাঁর বিবাহ দেন। নবম হিজরিতে উম্মে কুলছুম রাদিয়াল্লাহু আনহাও মৃত্যু বরণ করেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন,”আমার যদি ৩য় কোন কন্যা থাকতো (অন্য এক বর্ণনায় চল্লিশ জন কণ্যা থাকতো) তাহলে তাঁকেও আমি উছমানের সাথে বিবাহ দিতাম”।
খেলাফত
হযরত উমর ফারুক (রা.) তার শেষ জীবনে যে ছয় জন ব্যক্তিকে নিজেদের মধ্যে যেকোনো একজনকে তার খলিফা হওয়ার অধিকার দিয়েছিলেন, তারা নিজেদের মধ্যে অনেক কথা-বার্তা ও আলাপ-আলোচনা এবং পরামর্শ করে তিনদিন পর সর্বসম্মতিক্রমে হযরত উছমান (রা.) কে তার খলিফা নিযুক্ত করেন।
সর্বপ্রথম হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.) অতঃপর হযরত আলী (রা.) খুশি খুশি তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এটা দেখে সমস্ত মুহাজির ও আনসার সাহাবা রাদিআল্লাহু আনহুমগণ আগে বাড়েন এবং সবাই তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এইভাবে তিনি পহেলা মুহাররম চব্বিশ হিজরি সনে খেলাফতের মসনদে আসীন হন।
শাহাদাতঃ
উছমান (রা.) বারো বৎসরের কিছু অধিক সময় খিলাফত পরিচালনা করেন। তিনি অনেকগুলো দেশ বিজয় করেন এবং মুসলমানদের হাতে অনেক ধন সম্পদ আসে। তিনি স্বভাবগতভাবে নরম মেজাজ ও দয়াময় প্রকৃতির ছিলেন। আর আত্মীয়-স্বজনের আত্মীয়তা রক্ষা করার স্বভাব তার মধ্যে ভরপুর ছিল। এজন্য তিনি তাঁর কিছু নিকটাত্মীয় ও প্রিয়জনদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু দায়িত্ব দেন। মুনাফিক সাবায়ি চক্রান্তকারীরা এটিকে পুঁজি করে ধীরে ধীরে সাধারণ লোকদেরকে তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। অতঃপর সেই বিদ্রোহীরা উছমান (রা.) এর বাড়ি ঘেরাও করে,যা চল্লিশ দিন যাবত স্থায়ী ছিল। যুদ্ধের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এ সময় তিনি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেননি।পরিশেষে ১২ বছর ১২ দিন খিলাফত পরিচালনা করার পর ৩৫ হিজরীর জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখ রোজ শুক্রবার আসরের সময় তিনজন বিদ্রোহী তার ঘরে প্রবেশ করে তাকে শহীদ করে দেয়। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
কাফন-দাফন
পরের দিন শনিবার রাতে অল্প কয়েকজন লোক তার জানাজা উঠায়। বিশৃংখলাকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে মাত্র ১৭ জন ব্যক্তি তার জানাযার নামায আদায় করেন।
এরপর জান্নাতুল বাকির পিছনে “হুশ্শ কাউকাব” নামক জায়গায় তাঁকে দাফন করা হয়।
আল্লাহ তাআলা ইসলামের এই মহান ও মজলুম খলিফাকে তার রহমতের চাদরে আবৃত করে রাখুন। আমিন।