ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা

লেখক: মাওলানা আসআদ হাসান


—————————-
নাম: উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
উপনাম: আবু হাফস
উপাধি: ফারুক-ই-আজম
পিতা: খাত্তাব
মাতা: হানতমা
———————–
উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর বংশ নবম পুরুষে গিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশের সাথে মিলে যায়।
_
জন্ম
প্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নবীজির আগমনের ১৩ বছর পর জন্মগ্রহণ করে।
—————-
গঠন বৈশিষ্ট্য
উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর গায়ের রং ছিল বাদামী। চেহারা ছিল মাংসল এবং দাড়ি ছিল ঘন।মাথা ছিল চুল শূন্য। চোখদুটো সর্বদা লাল থাকতো।তার স্কন্দ এত উঁচু ছিল যে, অধিক সমাগম লোকের মাঝেও দৃশ্যমান থাকতেন।
—————
ইসলাম গ্রহণ
বাল্যকালে তিনি উট চরাতেন। যৌবনে অশ্ব পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি ছিলেন বিশুদ্ধভাষী এবং সাহসী। ইসলাম গ্রহণ করার আগে তিনি মুসলমানদের চরম শত্রু ছিলেন। কিন্তু নবীজির দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাআলা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দেন। তিনি নবীজীর নবুয়তের ষষ্ঠ বছর ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স আনুমানিক ছাব্বিশ। তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৫০ থেকে ৫২জন। তারমধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৩৯ কিংবা ৪০জন।আর মহিলার সংখ্যা ১১ কিংবা ১২ জন। উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইসলাম গ্রহণ করার ফলে ইসলামের মর্যাদা দিন দিন বাড়তে থাকে।
————————–
হিজরত
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরতের ইচ্ছা করলেন এবং সকল সাহাবায়ে কেরাম নবীজির আদেশ মোতাবেক মক্কা শহর ছেড়ে মদীনা শরীফে যার যার সুবিধা অনুযায়ী সংগোপনে হিজরত শুরু করেন।কিন্তু উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যখন হিজরতের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলেন, তখন তিনি একটি বর্ষা ও একটি তলোয়ার সাথে নিয়ে শত্রুপক্ষের সামনে বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলে বিনাবাধায় মদিনায় চলে আসেন। তার পথ রোধ করার দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারেনি।
_____________
খেলাফত
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তিনি তার জীবদ্দশায় সকল সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আজমাইন এর সর্বসম্মতিক্রমে উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে যান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার ইন্তিকালের পর সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত হয়ে খুশি চিত্তে উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। তিনিই একমাত্র প্রথম খলিফা যাকে সর্বপ্রথম আমিরুল মুমিনিন উপাধিতে ভূষিত করা হয়।আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ইন্তেকালের পর তিনি হুকুমতে ইসলামীর সকল দায়িত্ব সুচারুরূপে পরিচালনা করেন।


নবীজির সাথে নতুন সম্পর্কে
হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার স্বামী ইন্তেকালের পর হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা কে স্বামীর বিরহবেদনায় শোকাহত দেখে তাকে খুশি করার জন্য নবীজির কাছে উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার ব্যাপারে প্রস্তাব রাখেন। নবীজি এই প্রস্তাব সানন্দে কবুল করে নেন। অতঃপর তৃতীয় হিজরীতে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মেয়ে হাফসা নবীজির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এভাবে হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নবীজির স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করে উম্মুল মুমিনীন উপাধিতে ভূষিত হন। এই সূত্রে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জামাতা হন এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নবীজির শ্বশুর।
—————————-
মৃত্যু
হযরত মুগীরা বিন শু’বার গাইরে মুসলিম গোলাম আবু লু’লু তার মালিক তার উপর কোন কারনে ট্যাক্স আরোপ করলে তিনি তৎকালীন খলীফা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট তার বিরুদ্ধে নালিশ করলেন। খলিফা মুনাসিব মনে করে তার প্রস্তাবিত নালিশ প্রত্যাখ্যান করলেন। এরই জের ধরে খলিফার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘৃণ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই আবু লু’লু. এবং তাতে সে সফল হয়। একদিন সুযোগ বুঝে রাতের শেষ প্রহরে এসে মসজিদে নববীর এক কর্নারে আত্মগোপন করে। এদিকে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যখন ফজরের নামাজ পড়াতে মেহরাবের সামনে আসেন তখন সে কুখ্যাত আবু লু’লু তার বিষ মিশ্রিত ধারালো খঞ্জর দ্বারা আক্রমণ করেন যার ফলে তিনি মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হন.। এবং দিন যত গড়াতে লাগলো শারীরিক পরিস্থিতি তত্ত্ব খারাপ হতে লাগল। যখন তিনি বুঝতে পারলেন মৃত্যু সন্নিকটে তখন তিনি বিশিষ্ট কয়েকজন সাহাবীকে ডেকে সকল মুসলমানদের ওসিয়ত করে গেলেন যে, আমার পর এই সাহাবীরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা তোমরা সকলে মেনে নেবে। এবং পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত হবে না। উপস্থিত সকলেই তা মেনে নিলেন।( বিশিষ্ট সাহাবীগণ হলেন-যথা:–১. উসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ২. আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ৩. আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ৪. সা’আদ রাদিআল্লাহ তা’আলা আনহু৫. হযরত জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু.৬. হযরত তালহা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু.)
অতঃপর উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু লাগাতার 14 দিন অসুস্থ থাকার পর দশই মহররম 24 হিজরীতে রবিবার দিন মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল 63 বছর। তিনি 10 বছর দশ মাস শাসন কার্য পরিচালনা করেন। হযরত সোহায়ব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার জানাযার ইমামতি করেন। পরিশেষে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর বাম পাশে দাফন করা হয়।

Leave a Reply