লেখক: মাওলানা রফিকুল ইসলাম
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে পানাহার করা একটা স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে৷ পানি তো বটেই, খাদ্য জাতীয় বস্তুও নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়ে খাওয়া হচ্ছে৷ এটা অন্যায়৷ এটা ইসলামের শিক্ষা নয়৷ হাদীসে দাঁড়িয়ে পানাহার সম্পর্কে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে৷
সহীহ মুসলিম শরীফের একটি বর্ণনা—
‘হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাঃ লোকদের দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।
কাতাদা বললেন, আমরা বললাম, তাহলে খানা? তিনি জবাবে বললেন-[দাঁড়িয়ে খানা খাওয়া তো] আরো জঘন্য ও খারাপ।’ [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২০২৪]
মুসলিম শরীফের আরেক বর্ণনায় এসেছে—
‘হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাঃ দাঁড়িয়ে পানকারীকে তিরস্কার করেছেন।’ [হাদীস নং-২০২৫]
হাদীসের অপরাপর কিতাবেও দাঁড়িয়ে পানাহার সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে৷ হাদীসের প্রসিদ্ধ কিতাব মুসনাদে আহমদেও এ সম্পর্কিত বর্ণনা পাওয়া যায়৷ যেমন : ‘হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাঃ লোকদের দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। [ হাদীস নং-৮৩৩৫]
সমস্ত হাদীস সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয়, দাঁড়িয়ে নয়; বসে পানাহার করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত৷
অথচ বর্তমান পরিবেশের দিকে তাকালে যেন মনে হয় এটি কোন বিষয়ই নয়৷ সর্বত্র এখন দাঁড়িয়ে খাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ চৌরাস্তার মুড়ে ঝালমুড়ি কিংবা চটপটির দোকানে, বিভিন্ন টং দোকানের সামনে,পার্কে, রাস্তাঘাটে, বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে, এককথায় সবজায়গায় দাঁড়িয়ে খাওয়ার একটা রেওয়াজ যেন চালু হয়ে গেছে৷ আর খাওয়াটাও আহমরি কিছু না৷ হয়ত ঝালমুড়ি, চটপটি, নয়ত ফুসকা, বুট বাদাম এসব৷ এমনও না যে প্রচণ্ড ক্ষুৎপিপাসা–কোথাও বসার জায়গা নেই৷ অগত্যা দাঁড়িেই খেতে হচ্ছে৷ এমন হলেও সমস্যা ছিল না৷ বিপদের সময় দাঁড়িয়ে খেতে বাধা নেই৷ ঘোরতর বিপদ হলে, হালাল খাদ্য পাওয়া না গেলে প্রাণ বাঁচে মতো হারাম জিনিস খেতেও বাধা নেই৷ সুরা বাকারায় আল্লাহ পাক এরশাদ করেন—’তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়৷ অবশ্য যে-লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয় তাহলে তার গুনাহ হবে না৷ নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷’ (আয়াত : ১৭৩) বোঝা যাচ্ছে বিপদে পড়লে যেখানে হারাম খাদ্য খেতে পর্যন্ত বাধা নেই, সেখানে দাঁড়িয়ে খাওয়া অবশ্যই অবৈধ হবে না৷
কিন্তু স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা, গল্পচ্ছলে দাঁড়িয়ে খাওয়া হচ্ছে৷
আর এসব জিনিস বেশিরভাগই শিশু-কিশোর এবং যুবকরা খায়৷ বুড়ো মানুষেরা ঝালমুড়ি চটপটি এসব হাবিজাবি খায় কম৷ কাজেই ওদের ব্যাপারে দাঁড়িয়ে খাওয়ার প্রবণতাও এতটা নেই৷
কথা হলো, যখন এসব না খেলেও হচ্ছে, মরে যখন যাচ্ছি না৷ তাহলে ফূর্তি করে রাসুলের সুন্মতকে জলাঞ্জলি দিয়ে দাঁড়িয়ে খাওয়ার অভিশাপ কেন মাথায় নিবো? তাছাড়া খেতে মন চাইলে পেকেটে করে নির্দিষ্ট জায়গায় এনে বসে খেলেই হয়৷ দোকানে বসার জায়গা থাকলে ওখানেও খাওয়া যায়৷ আজ থেকে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, কখনো অপ্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পানাহার করবো না৷ আল্লাহ পাক তৌফিক দান করুন৷ আমীন!