নবীজির পরিচয় কুরআনের ভাষায়

নবীজির পরিচয় কুরআনের ভাষায়

(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

আসিফ আহমাদ

আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ আলোচিত ব্যাক্তি হলেন মুহাম্মাদুর রাসুল (সাঃ)। তাঁকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যত পর্যালোচনা, গবেষণা ও গ্রন্থ রচিত হয়েছে; সম্ভবত অন্য সব ব্যক্তিকে নিয়ে পর্যালোচনা, গবেষণা গ্রন্থ রচনার সমষ্টিও সেসবের সমতুল্য নয়।

তবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও তৃপ্তিদায়ক পরিচয়, তার রিসালাতকে উপলব্ধি করার জন্য দলিলসিদ্ধ আলোচনা আমরা শুধু কুরআনই পেতে পারি। কারণ, কুরআন নিজে প্রমাণসিদ্ধ হওয়ার জন্য রাসুলের রিসালাত ও তাঁর মহত্বের আবশ্যকতা প্রমাণিত হওয়াটাও তো জরুরী। তাই এই নিবন্ধে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে কুরআনে রাসূলের পরিচয় বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

তিনি একজন রাসুল

কুরআনে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে তার যে পরিচয়টি তুলে ধরা হয়েছে, তা হচ্ছে-তিনি একজন আল্লাহর প্রেরিত বার্তাবাহক-রাসুল।

হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সন্ধিপত্রে কাফেররা যখন “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”লেখার ব্যাপারে আপত্তি করল, তখন আল্লাহ তায়ালা সূরা ফাতহের শেষ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন; “محمد رسول الله”অর্থাৎ: মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।(সূরা ফাতহ:২৯)

অর্থাৎ, কাফেরদের অস্বীকারের কারণে যদিও শেষ পর্যন্ত সন্ধিপত্রে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ লিখতে হচ্ছে; কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে তিনি আল্লাহর রাসূল। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্তের জন্য এ সত্যের উপর সিলমোহর করে দিয়েছেন। (তাউজিহুল কুরআন)

শুধু তাই নয়, বরং কুরআন এটা স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, তিনি কেয়ামত তক সকল জিন- ইনসান এর জন্য প্রেরিত রাসুল। সূরা আম্বিয়ার একশত সাত সংখ্যক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,

“وما ارسلناك الا رحمه للعالمين”অর্থাৎ, আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ। আরো ইরশাদ হয়েছে, ماكان محمد ابا احد من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبيين

অর্থাৎ, (হে মুমিনগণ!) মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন, কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসূল এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ। (সূরা আহযাব:৪০)

রাসুল ছিলেন মুযাক্কি ও মুয়াল্লিম

জমিনবাসির সংরক্ষিত ইতিহাস এ কথার সাক্ষী যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দীর্ঘকালব্যাপী নীরব বিপ্লব সৃষ্টিকারী। তিনি তার ইসলামী বিপ্লব টি মাত্র 23 বছরে এমন এক সময়ে ঘটিয়েছেন, যখন প্রচার মাধ্যম হিসেবে ছিল শুধুমাত্র তাঁর পবিত্র ও মোবারক যবান।

আর সংশোধনও করেছেন এমন সব মানুষদের যারা ছিল অশিক্ষিত। মৃত জন্তু ভক্ষণ করত। মদ্যপান ছিল তাদের গৌরব। কন্যা সন্তানদের জীবিত কবর দিত। সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে বংশানুক্রমে যুদ্ধ করত।

এমন সব মানুষদের মধ্যে যখন রাসুল আসলেন, তখন সেই বর্বর মানুষগুলিকেই তিনি আমূল বদলে দিলেন। তাঁরাই তখন অন্যকে অগ্রাধিকার দিতে শিখলো। কিতাবুল্লাহর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠলো। মদ জুয়া ও সুদের মতো মানবতাবিরোধী বস্তুগুলো তাদের জীবনে হয়ে উঠলো অতীব ঘৃণ্য। নারীরা পেল নিরাপত্তা মর্যাদা ও অধিকার। পৃথিবী হয়ে উঠল নিরাপদ। পবিত্র কুরআনের ইরশাদ:هو الذي بعث في الاميين رسولا منهم يتلو عليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمه وان كانوا من قبل لفي ضلال مبين

অর্থাৎ, তিনিই উম্মিদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে। তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। তাদেরকে কিতাব ও হিকমত এর শিক্ষা দিবে। যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিপতিত ছিল। এবং (রাসুল কে যাদের কাছে পাঠানো হয়েছে) তাদের মধ্যে আরও কিছু লোক আছে, যারা এখনও তাদের সাথে এসে যোগ দেয়নি। তিনি অতি ক্ষমতাবান, মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী।(সূরা জুমুয়া, ২-৩)

নির্দ্বিধায় বলা যায়, চলমান নীরব ইসলামের এই বিপ্লব রাসুলের সত্যতার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন।

নবীজি ছিলেন উম্মি

পূর্বোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, রাসূলকে উম্মীদের ভিতর থেকে নির্বাচন করা হয়েছে। উল্লেখ করতে হয় যে, রাসুল নিজেও ছিলেন একজন উম্মি। উম্মি অর্থ -যিনি লিখতে পড়তে জানেন না। উম্মি অর্থ-অশিক্ষিত-অমার্জিত নয়। তাছাড়া রাসূলের জন্য উম্মি হাওয়া দূষণীয় বা দোষণীয় কোনটাই নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ: وما كنت تتلو من قبله من كتاب ولا تخطه بيمينك اذا لارتاب المبطلون

অর্থাৎ, আপনি ইতিপূর্বে কোন কিতাব তেলাওয়াত করতেন না। আর নিজ হাতে কোন কিতাব লেখেনওনি। সেরকম কিছু হলে ভ্রান্তপথ অবলম্বনকারীরা সন্দেহ করতে পারত।(আনকাবুত: ৪৮)

এই আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম মুফতি তকী উসমানী (দাঃবাঃ) তাওযিহুল কুরআনে লিখেছেন,”আল্লাহতালা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উম্মি বানিয়েছেন। তিনি লেখাপড়া জানতেন না। এ আয়াতে তার রহস্য বলে দেওয়া হয়েছে যে,উম্মি হওয়া সত্ত্বেও তার মুখে কুরআন শরীফের মত কিতাব উচ্চারিত হওয়াটা একটি বিরাট মুজেযা। যে ব্যক্তি লেখাপড়া বলতে কিছু জানেনা, তিনি মানুষের সামনে পেশ করছেন এমন এক সাহিত্যালংকারপূর্ণ কিতাব, সমগ্র আরবজাতি যার তুলনা উপস্থিত করতে অক্ষম। এটা কি প্রমাণ করে না, এই কিতাব কোন মানুষের রচনা নয়। এবং এর বাহক আল্লাহ তায়ালার একজন সত্য রাসুল। কুরআন মাজীদ বলছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি লেখাপড়া জানতেন, তবে বিরুদ্ধবাদীগণ কিছু না কিছু বলার সুযোগ পেয়ে যেত। তারা বলে বসতো, তিনি কোথাও থেকে পড়াশোনা করে এ কিতাব সংকলন করে নিয়েছেন। যদিও তখনো এটা ফজুল কথাই হতো, কিন্তু এখন তো তাও বলার সুযোগ থাকলো না। (তাওযীহুল কুরআন)

পরিশেষে বলতে চাই, বস্তুত: নবীজি ছিলেন আলোকিত এক বাতি। যার আলোয় এই পৃথিবী আলোকময়। তাঁর আলো ছাড়া এই ভুবন বিস্তৃত এক আঁধার। মহান আল্লাহর ইরশাদ:

يا ايها النبي انا ارسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا وداعيا الى الله باذنه وسراجا منيرا

অর্থাৎ, হে নবী! আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে-এবং আল্লাহর নির্দেশে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও আলো-বিস্তারকারী প্রদীপরূপে।

2 Replies to “নবীজির পরিচয় কুরআনের ভাষায়”

  1. মাশাআল্লা, জাযাকাল্লাহ খাইরান

Leave a Reply