বিষণ্ন মনের পরিভ্রমণ

বিষণ্নতার ঘনঘোরে অতিবাহিত সময়গুলো কাটে এ বই পড়ার মাধ্যমে। স্বাভাবিকত কোন বই লাগাতার পড়ে শেষ করা আমার জন্য দুঃসাধ্য। বইয়ের কিছু অংশ পড়ার পর শুরু হয় মোচড়ামুচড়ি। তাই এখন স্বেচ্ছায় একনাগাড়ে এক বই পড়া ছেড়ে দিয়েছি। মনের অনুভূতির সাথে মিলিয়ে বই পড়ি। সে হিসেবে বিষণ্ণতার সময় এরূপ কিছু নির্বাচন করে রেখেছি। সেসব নির্বাচিত বইয়ের তালিকায় এ বইটিও আছে। মানুষের জীবনে দুঃখজনক সকল ঘটনা মনে ছাপ ফেলে যায়। পরবর্তীতে স্মৃতিচারণের সময় অনুঘটক হয় সেসব দুঃখ। লেখক এখানে স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নিজের দুঃখবোধকে শৈল্পিক ব্যঞ্জনায় আবির্ভূত করেন। কিন্তু অনুসরণ করেন ভিন্ন অনুষঙ্গ। প্রথমে নিজের নিকটতম বন্ধুর মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত হৃদয়ের ব্যাথা নিয়ে হাজির হন। পরে তার বিষণ্ণ আত্মাকে নিয়ে মনের আত্মকথনগুলো কথপোকথনের ধারায় আনেন। তাতে ফুটে ওঠে বিষণ্ণতার অনুপুঙ্খসমেত বয়ান। সামাজিক অবক্ষয়, প্রাচ্যের ব্যর্থতা, ধার্মীয় অনুন্নতির নানা প্রেক্ষাপট ধরা পড়ে তার লেখনীতে। এছাড়া অতীত জীবনের ব্যাথাতুর স্মৃতি, প্রেমিক মনের রোমান্টিকতা, একাকী জীবনের বিরহকাতরতা বা প্রবৃত্তির লোলুপতা নিয়ে অনুভব-সঞ্জাত আত্মকথনগুলো আক্ষরিক আল্পনায় সজ্জিত হয় নিপুণভাবে। প্রত্যেকটি লেখা আমাকে পড়তে হয় একরাশ মোহময়তা নিয়ে। যেন তিনি আমার মনের কথাগুলোই বলে গেলেন।

উক্ত গ্রন্থের লেখক হচ্ছেন লুতফি জুমআ’। উনিশ-বিশ শতকের অন্যতম সাহিত্যিক। গল্প, উপন্যাস, নাটক, সাহিত্য, সাহিত্য-সমালোচনা, সামাজিক অনুষঙ্গ নিয়ে নানা বই লিখেছেন। তার লেখনীতে গতানুগতিক ধারার সংমিশ্রণ নেই, চাই সেটা কাহিনীগত দিক থেকে হোক বা শব্দচয়নের ক্ষেত্রে। সামগ্রিকভাবে প্রাতিস্বিকতার ছাপ সুস্পষ্ট। তার রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে “তিযকারু-স্ববা” “ফি-ওয়াদিল-হুমুম” অন্যতম। এছাড়া ত্বহা হোসাইনের “আশ-শে’রুল-জাহীলি” যখন কোরআনি ভাষাতত্ত্বকে সন্দেহজনকভাবে উপস্থাপন করে, তখন মুস্তাফা সাদিক রাফেয়ী, খিজির হোসাইন, ফরিদ ওয়াজদী, মাহমুদ মোহাম্মদ শাকের মতো কলমী শক্তি নিয়ে হাজির হন। লিখেন “আশ-শিহাবুর রাছেদ”। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী নিয়ে তার গ্রন্থ “সাওরাতুল ইসলাম বাতালুল আম্বিয়া : আবুল কাসেম মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ” নিজস্ব ক্ষেত্রে অনন্য। নবীজীবনের নানা অনুষঙ্গ দার্শনিকভাবে বিশ্লেষণ করেন। প্রাচ্যবিদদের নানা অযৌক্তিকতার কড়া উত্তর দেন স্বতসিদ্ধ যৌক্তিক ধারায়। ১৯৫৮ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে রহম করুন।

Leave a Reply