ইসলামপন্থী সকলেই একমত হবে যে, উনিশ ও বিশ শতকে ইসলামী বিশ্ব বিস্তৃত পরিসরে যে সামরিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছে, তা শুধু সামরিক বা অর্থনৈতিক পর্যায়ে না এবং আক্ষরিক অর্থে নিছক বস্তুবাদী স্বার্থকেন্দ্রিকও না; বরং তার প্রভাব ইসলামী সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতি কেন্দ্রিক মানুষের কর্মনীতি, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও অতিক্রম করে। আর এসব কর্মকাণ্ড এবং উদ্দেশ্যপূরণ সম্ভব হয় বহির্শক্তির সাম্রাজ্যবাদী অপতৎপরতার মাধ্যমে। অন্য যেকোন সময় থেকে বিগত দু’শতকে অতিব বাস্তবায়নের সাক্ষ্য বহন করে। টার্গেট নির্ধারণ ও উদ্দেশ্যপূরণ একই সময়ে হয়। অথচ আগেকার সময়ে এ দু’য়ের মাঝে যুগভেদে প্রচুর পার্থক্য।
পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এ যুদ্ধকে মুসলিম চিন্তকগণ নাম দিয়েছেন চিন্তাবৃত্তিক বা সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম বিশ্বে তাদের আগ্রাসনবাদের সামগ্রিক বিস্তার, মুসলমানদের চিন্তাবৃত্তিকে পশ্চিমা চিন্তার পূর্ণ তাবেদার বানানো, বরং তাদের মানসপটে এ দাবীও সঞ্চার করা যে, মুসলমানদের উন্নতি পশ্চিমাদের অনুসরণে; তাদের মূল্যবোধ, ধ্যানধারণা, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি — সর্বধারায় পশ্চিমাকরণের মাধ্যমে। আর এসবের মাধ্যমে তাদের সাম্রাজ্যবাদ পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হবে। সমরনীতি, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে আগ্রাসনমূলক ভাবনার বিস্তার হবে।
তাদের এ সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য উপনিবেশিক জাতিগোষ্ঠীর মাঝে অধীনত্বের বাস্তবায়ন। নতুবা তারা সামরিক আগ্রাসনের ক্ষেত্রে যুগপৎ অবস্থান তৈরি করতে পারবেনা। সামাজিক রীতিনীতি ও জাতিগোষ্ঠীর জীবনবৃত্তি এটাকে কর্মময় করে। যেন এই ধরণের যুদ্ধ উপনিবেশিক দেশসমূহে অধীনত্বকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পর্যায়ে বহাল রাখে। তারা ইসলামী বিশ্বে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে ক্ষেত্রে তারা অনেকাংশে সফল।
তাদের এ যুদ্ধের পরিভাষাগত নাম যতই ভিন্ন হোক, তাকে “চিন্তাবৃত্তিক যুদ্ধ” “সাংস্কৃতিক যুদ্ধ” “সাংস্কৃতিক আগ্রাসন” বা পশ্চিমাকরণ বলা হোক, যদিও শেষ নামটিই এ ক্ষেত্রে অধিক সাযুজ্য ও ব্যাপকতর, তবে এসব পরিভাষার আনুষঙ্গিক ধারাগুলো ইসলামী চিন্তাবৃত্তি, সংস্কৃতি ও সমাজনীতিতে বাস্তবায়নযোগ্য হয়।
এ চিন্তাবৃত্তিক যুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার যে দৃশ্যায়ন হয় উপনিবেশিক জাতিগোষ্ঠী বিরুদ্ধে; কখনো তা ভয়-ভীতি বা আগ্রহ উদ্দীপক পন্থায়, কখনো জোরজবরদস্তির মাধ্যমে, কখনো তাদের মূল্যবোধ নিয়ে অমূলক প্রশ্ন, তুচ্ছতাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে সভ্যতা ও সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের মাঝে বশ্যতা স্বীকারের মানসিকতা তৈরি করা হয়। এ অবস্থার বিবেচনায় হার্বার্ট চেললার সমগ্র বিশ্বকে দু’ভাগে বা দুই কেন্দ্রবিন্দুতে ভাগ করেন : পাশ্চাত্য, যারা মৌলিকত্বের ধারকবাহক ও সমগ্র বিশ্ব, যারা প্রান্তিক মনোভাবের অধিকারী। তার মতে “সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে”র সংজ্ঞা হলো : বিশ্বব্যাপী আধুনিক ব্যবস্থাপনার অধীনস্থ করার জন্য সামগ্রিক কার্যক্রম এবং তাদের জোরজবরদস্তি ও বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে বশীভূতকরণের চেষ্টা, যাতে আগ্রাসী শক্তির নির্ধারিত মূল্যবোধ ও মানদণ্ড ব্যাপৃত হয় এবং তাদের অধীনে সকল সমাজব্যবস্থা অনুপ্রবেশিত হয়।
বিশ্বায়ন যুগের ধারাবাহিকতা, যা বিশ শতকের শেষ দুই দশক থেকে আমরা দেখে আসছি, এটা সেই সাংস্কৃতিক যুদ্ধের প্রসারিত রূপ। ইসলামী বিশ্বে চিন্তাবৃত্তিক যুদ্ধের মাধ্যমে পশ্চিমাকরণের নতুন মাধ্যম সংস্থাপন করছে। তার প্রতিকৃতি ও প্রতিরূপ বিগত শতকদ্বয়ে সংঘটিত কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতিগত দিক।
তারা এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রাখে। মৌলিকভাবে আমরা সেটাকে তিনভাগে বিভক্ত করতে পারি :
- ১. রাজনৈতিক ক্ষেত্র : মুসলমানদের রাজনৈতিক চেতনাকে পরিবর্তন করা, ধর্মকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে পৃথক করা। পরবর্তীতে তাদের সামগ্রিকভাবে ধর্মচ্যুত করা।
- ২. সামাজিক ক্ষেত্র : মুসলমানদের মৌলিক মূল্যবোধ থেকে দূরে সরিয়ে পাশ্চাত্য মূল্যবোধকে তাদের মনপুত করা, যা নিছক বস্তুকেন্দ্রিক। এবং আধ্যাত্মিক ধ্যানধারণা থেকে সম্পূর্ণ বিদূরিত করা।
- ৩. শিক্ষাদীক্ষা ও চিন্তাবৃত্তিক ক্ষেত্র : মুসলিম বুদ্ধিবৃত্তিকে চিন্তাগত ধারায় পরিবর্তন করা; একত্ববাদী ধ্যানধারণা থেকে বস্তুবাদ কেন্দ্রিক করা। এছাড়া তাদের ভাবনাগত দর্শন, মতাদর্শীয় উপলব্ধি ও মূল্যবোধকে মুসলমানদের মাঝে অধিক প্রচলিত করা। এর মাধ্যমে ইউরোপীয় চিন্তাবৃত্তির দ্বান্দ্বিক ক্ষেত্রগুলো মুসলিম চিন্তায় স্থানান্তরিত করে, মুসলমানদের নিজস্ব কর্মকাণ্ড পালনের ক্ষেত্রে ব্যাহত করে এবং উন্নতি-ঊর্ধ্বগতির পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
বর্তমান সময়ে পশ্চিমা আগ্রাসন, অন্ধানুসরণ ও স্থবিরতার ধারায় মুসলিম চিন্তাবৃত্তির পরাভববাদী মানসিকতা — এখানে এসে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন : বর্তমান মুসলিম চিন্তাবৃত্তির এই মানসিকতা কিভাবে ক্ষয় হবে? তা কিভাবে উন্নয়নের ধারায় প্রবাহিত হবে? মুসলমানরা কেন পশ্চাৎবর্তী, অন্যেরা কেন উন্নয়নপন্থী? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মুসলিম চিন্তকগণ অনেক চিন্তার ক্ষয় করেছেন। অনেকে এ ক্ষেত্রে কোন চিন্তা ও বিবেচনাহীন পাশ্চাত্য উন্নয়নের মাপকাঠিকে কার্যকরী মনে করে। তাই মুসলমানদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক মূল্যবোধের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে পাশ্চিমাকরণের ধারায় লিপ্ত হয়। সাথে সাথে নিজেদের মতো একদল মুসলিমদের এ ভাবনার সাথে মিলিয়ে নেয়, যারা তাদের স্বরে সুর মিলিয়ে মুসলমানদের এই পথের দিকে আহ্বান করে।
এ কারণে বর্তমানে মুসলমানদের উন্নয়নের ধারণাকে দুটি প্রবণতায় বিভক্ত করতে পারি। যার একটি আমরা উল্লেখ করেছি। নামকরণের ক্ষেত্রে আমরা তাদের প্রভাববাদী বলতে পারি।
পশ্চিমাকরণের ধারা সমর্থন করার ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো : ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রের বাস্তবায়ন ও সভ্যতা প্রতিষ্ঠা ভিন্ন, তদ্রূপ পার্থক্য রয়েছে ইসলামী ঐতিহ্য ও বর্তমান আধুনিকতাবাদের মাঝে… তাই বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতার সার্বজনীনতায় বিশ্বাস না করে প্রাচীন ইসলামী ঐতিহ্যের বেড়াজালে লেপ্টে যাওয়া বোকামি। বর্তমানে মুসলমানদের পশ্চাদগামীতা তাদের আগেকার সংস্কৃতির তাবেদারি এবং প্রাচীন মূল্যবোধের প্রতি অটুট বিশ্বাসবোধ থাকার কারণে।
উত্তরণপন্থী চিন্তকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মতামত হচ্ছে, পশ্চিমাকরণের স্রোত থেকে মুসলমানদের উদ্ধার, যা একদিক থেকে পশ্চিমা শক্তির জোরজবরদস্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত, অন্যদিক মুসলমানদের অবক্ষয়, অন্ধানুসরণ এবং নিশ্চলতার ফলশ্রুতি। তাদের মতে মুসলমানদের পুনর্জাগরণ তখনই সম্ভব, যখন তাদের কর্মধারা সেই মূলস্রোতে প্রবাহিত হবে, যা আরো চৌদ্দ শতক আগে তাদের প্রারম্ভিক উত্থানের সময় হয়েছিল। মালেক বিন নবি’র ভাষায় : কোন সমাজের বিপ্লব হবে সে নিয়মনীতির অনুসরণে, যার বাধ্যবাধকতায় সে সমাজের জন্ম হয়েছিল। তাই পরবর্তীতে তার পুনর্নির্মাণ ও পুনর্গঠন সেই নিয়মবদ্ধতার আদলেই হবে।
এ দুই ধারার মাঝে আমরা সহজেই সঠিকতা নিরূপণ করতে পারি। আমাদের সামনে কোরআন আছে, হাদিস আছে। আমাদের অবলম্বনের ধারা সুস্পষ্ঠ। ইসলাম স্বয়ংসম্পূর্ণতার স্বকীয়তা নিয়ে অনন্য, একই সুতোয় ধর্মীয় মতবিশ্বাস ও জীবনবৃত্তিক চিন্তাভাবনার সমন্বয়ক। তার বিপরীতে পাশ্চাত্য-চিন্তাবৃত্তিতে এ দু’য়ের মাঝে যোজন যোজন ফারাক। এখান থেকেই স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা দেখতে পাই উভয় চিন্তাবৃত্তির মাঝে। যার একটি গভীরমূলে প্রোথিত। মূলোৎপাটন বা বিদূরিতকরণ অসম্ভব। অন্যটি সেরূপ নয়। রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতার কারণে হয়তো মাঠ গরম তার। কিন্তু এ জ্বালানি শেষ হলে তবে নামটাও অবশিষ্ট থাকবেনা।
ইসলাম মৌলিকত্বের চাদরে জড়িয়ে আমাদের অন্ধানুসরণের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। উৎসাহ দিয়েছে সে চাদরের আবেশে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে। মুসলমানগণ যখন এ মৌলিকত্বের উপরে ছিলো, হাজারো বাধা-বিপত্তি ও বিঘ্নতার পথ মাড়িয়ে স্বশক্তিবলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। কোন সংকট বা চক্রান্ত-ধারা তাঁকে কাবু করতে পারেনি। কিন্তু যখন এ স্বকীয়-ধারা থেকে তারা বিচ্যুত হয়, ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে, তাদের বীরত্ব-ধারা ও শৌর্যবীর্যের আখ্যান পৌরাণিকতায় রূপান্তর হয়। সভ্যতা ও সংস্কৃতি যাদুঘরের কাষ্ঠ-তাকে উঠে যায়।
বাস্তবিকপক্ষে মুসলমানদের এ অবনতির পেছনে বহির্শক্তির হাত প্রত্যক্ষ ছিলো। তাদের বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে সোচ্চার ছিলো তাগুতের জোটশক্তি।
পূর্বেকার সময় থেকে যুগ প্রেক্ষাপটে ইসলাম-বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে মুসলমানরা মৌলিকত্বের পথ থেকে বিদূরিত হয়েছিল ক্রমে ক্রমে। কখনো তা বিদাআ’ত-কুসংস্কারের অনুপ্রবেশে, কখনো বিদ্রোহী শক্তির সূত্রপাতে, কখনো বাতিল মতাদর্শের ব্যাপক প্রচার-প্রসারে।
বর্তমানে তার সবধারাই অবশিষ্ট আছে। সাথে যুক্ত হয়েছে আরো নব্য ধারা। যুক্ত হয়েছে বিজ্ঞানের স্লোগান। প্রগতিবাদ এবং বৈশ্বিক চিন্তার মানসপটে সকলকে একীভূত হওয়ার আহ্বান। বাস্তবে ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের সংঘর্ষ নেই। যে সব ক্ষেত্রে এটা মনে করা হয়, তবে বিজ্ঞান সে বাস্তবতায় পৌছুতে পারেনি, যেখানে পৌছেছে ইসলাম। প্রগতিশীলতার সাথেও বিরোধ নেই ইসলামের, যদি তা হয় নৈতিকতার বাগডোরে আবদ্ধ। ইসলাম মানুষের একত্বের সমর্থক। কিন্তু তার প্রতিকৃতি যদি হয় ধর্মীয় মতাদর্শের জলাঞ্জলি দিয়ে, তবে ইসলামের সে একত্বের ঘোর বিরোধী।
বর্তমানে ইসলাম দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সেরা সময়ই অতিবাহিত করছে। মুসলমানদের সামনে দিন দিন প্রতিকৃতি পাচ্ছে নতুন নতুন মতাদর্শ, কর্ণগোচর হচ্ছে নতুন নতুন স্লোগান। ঈমান-একত্ববাদের গণ্ডি থেকে বের করার জন্য, ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার দায়হীন অনুভূতি তৈরি, পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসের বিশ্বাসে বিভিন্ন অমুলক প্রশ্নের ছুতো দেখিয়ে সন্দেহের বীজ বপন করা হচ্ছে। পৌত্তলিকতা, বস্তুবাদ, নাস্তিক্য ও অশ্লীলতার আহবান। আরবি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন, আঞ্চলিকতার সয়লাব ঘটিয়ে বিশুদ্ধ আরবির মৌলিকত্ব বিনষ্টিকরণ। ধর্মবিশ্বাস, সভ্যতা-সংস্কৃতির ইসলামি উপলব্ধি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উৎক্ষেপণ, মুসলিম প্রতিপালন-নীতির ভুয়া অসারতার দেখিয়ে পাশ্চাত্যধারার ব্যাপক প্রসারের অপচেষ্টা। জাতীয়তাবাদের স্লোগান তুলে মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর মাঝে ফাটল ধরানো ও বিভক্তির প্রণোদনা, ধর্মনিরপেক্ষতার আওয়াজ তুলে ইসলাম-বিরোধীতার বীজ বপন। গল্প, উপন্যাস ও নাটকে পৌরাণিকতা ও অশ্লীলতার বীজ দিয়ে মনোভাব-বিকৃতি।
এসব কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে জায়নবাদ, পশ্চিমায়নবাদ ও উপনিবেশিকদের হাত মূখ্য ছিল। কিছুটা সফলতার মুখও তারা পায়। যুবকদের মাঝেই এর কার্যত প্রভাব দৃশ্যত হয়। তাদের মুখরোচক স্লোগানে পাশ্চাত্য চিন্তাধারার মাঝেই নিজেদের মুক্তির পথ খুজতে শুরু করে। আর ইসলামি চিন্তাবৃত্তি হয়ে ওঠে সংকীর্ণতার আঁধার।
এখান থেকেই মুসলমানদের পরাজয়ের ধারা শুরু। বিদেশি মনোভাব আর পরভাববাদের লেজুড় ধরে নিজেদের যখন উন্নতচিন্তক মনে করে, অথচ এখান থেকেই তাদের পরাজিত মানসিকতার সূচনা ঘটে।
ইসলাম আমাদের মানব-সহজাত ইসলামী চিন্তাবৃত্তি এবং পৌত্তলিকতা ও বস্তুবাদের সংমিশ্রণজাত অন্যান্য চিন্তাবৃত্তির মাঝের পার্থক্য চোখে দেখিয়ে দেয়। পরভাববাদ, বিজাতীয় সংস্কৃতি ও পশ্চিমায়নের এ স্রোতে কুরআনী যে উপদেশের মান্যতা আমাদের মাঝে শতভাগ থাকার কথা ছিল, আজ তার কিঞ্চিতভাগও নেই আমাদের মাঝে। যদি থাকত, তবে এসবের বিপরীতে পাহাড়সম অবস্থান থাকতো আমাদের। কুরআন বলছে : “হে ঈমানদারগণ, তোমরা যদি আহলে কিতাব কোন গোষ্ঠির অনুসরণ কর, তবে ঈমানের পর তোমাদের পূণরায় কুফরিতে ফিরিয়ে দিবে”। (আলে ইমরান : ১০০) অন্যত্র : “হিংসার কারণে অনেক আহলে কিতাব চায় ঈমানের পর তোমাদের কুফরিতে ফিরিয়ে দিতে”। ( সূরা বাকারা : ১০৯)
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহেন সতর্কবার্তাকে অনেক গুরুত্বারোপ করেন, যাতে মুসলমানরা তাদের ফাঁদে না পড়ে। জাবের (রাযি.) থেকে বর্ণিত : ওমর (রাযি.) আহলে কিতাবদের থেকে পাওয়া কোন এক কাগজ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পাঠ করলেন। তখন তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন : তোমরা কি বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছো যেরূপ বিভ্রান্ত হয়েছিল ইয়াহুদী-নাসারারা। আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদের কাছে একটি অতি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দ্বীন নিয়ে এসেছি। মূসা (আঃ)-ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাঁর পক্ষেও অন্য কোন উপায় ছিল না। (আহমাদ ১৪৭৩৬)
ইমাম শা’বী (রা.) জাবির (রাযি.) মাধ্যমে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন : তোমরা আহলে কিতাবদের কিছু জিজ্ঞেস করোনা। কেননা তারা পথচ্যুত, তাই তোমাদের হেদায়াতের ঠিকাদারি তাদের নেই। আর তাদের দেয়া সংবাদের ক্ষেত্রে হয়তো সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে অথবা মিথ্যাকে সত্য বলবে।
এটা ইসলামের অন্যতম খুঁটি, যার ভিত্তি কুরআনে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাকে আরো জোরদার করে আমাদের ইবরত গ্রহণের সুযোগসাধ্য করেছেন।
মাশাআল্লাহ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা।