আমরা মেধা কোন কাজে লাগাবো?

মাওলানা শহীদুল্লাহ কাসেমী মাদানী


.
সূরা তাকাছুর – এর ৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা বলছেন, ثم لتسئلن يومئذ عن النعيم
উক্ত আয়াতের মর্মার্থ হলো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তায়ালা প্রদত্ত প্রত্যেকটি নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, আমরা সেই নিয়ামতগুলোর শুকরিয়া আদায় করেছি কি না? এখানে মৌখিকভাবে শুকরিয়া আদায় করা উদ্দেশ্য নয় ; বরং নিয়ামতগুলোকে যথাযথ ব্যবহার করা উদ্দেশ্য।
.
আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদেরকে অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত হলো ‘মেধা’। মেধা এমন একটি নিয়ামত, যা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত ( সৃষ্টিকুলের সেরা) বানিয়ে দিয়েছে। কারণ, মানুষ ছাড়া অন্যকোন প্রাণীর মেধা নেই। মেধা দিয়েই মানুষ তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী বড় বড় প্রাণী কে অনুগত বানাতে পারে। সুতরাং ‘মেধা’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত।
.
আমরা স্বপ্ন দেখি। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা বলছিনা। সেই স্বপ্নের কথা বলছি, যা ঘুমাতে দেয়না। আমরা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখি। বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নকে জয় করার স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নজয়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে ‘মেধা’। যারা বিশ্বজয় করেছে, মেধাকে কাজে লাগিয়েই তারা বিশ্বজয় করেছে।
.
বিশ্বজয় বললেই আমরা বুঝি আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং, স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্গ প্রমুখকে। আমরা বুঝিনা ইমাম আবূ হানীফা রহ., ইমাম বুখারী রহ., শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ., শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ্ প্রমুখকে। অথচ এঁরা সবাই মেধাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বজয় করেছেন। তাহলে ইসলামী স্কলারদের ব্যাপারে বৈষম্যমূলক আচরণ কেন?
.
কাফিয়া জামাতে পড়ি – কথাটি শুনার পর আমার একজন জেনারেল শিক্ষিত মামা বলেছিলেন, “তুমি তোমার মেরিট (মেধা) কে কাজে লাগাওনি।” তখন আমার কাছে উক্ত প্রশ্নের উত্তরটা সহজ হয়ে গেছিলো। আসলে এখানে নাযরিয়্যাতী (দর্শনগত) পার্থক্য আছে। জাগতিক উন্নতি এবং সুখ্যাতি কে যারা ‘জয়’ মনে করেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, ইসলামী স্কলাররা তাঁদের মেধাকে কাজে লাগায়নি। আর যারা পরকালীন উন্নতির জন্য দুনিয়াকে পরীক্ষার জায়গা মনে করে দ্বীনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করা কে ‘জয়’ মনে করেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, ইসলামী স্কলাররা তাঁদের মেধাকে ঠিকই কাজে লাগিয়েছেন, কিন্তু আইনস্টাইন গং রা কাজে লাগাননি।
.
এখন বড় প্রশ্ন হলো, আমরা মেধাকে কোন কাজে লাগাবো? যারা উপরোল্লিখিত আয়াতের মর্মার্থ ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন, তাদের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা সহজ। মহান আল্লাহ্ তায়ালা যখন জিজ্ঞেস করবেন, তুমি ‘মেধা’ কে কোন কাজে লাগিয়েছো? আমার পরিচিতি লাভের জন্য, ইসলামী বিধান ভালভাবে জেনে আমল করার জন্য, দাওয়াত ও তাবলীগের জন্য, সীরাতে মুস্তাকীমের দিকে মানুষকে আহবান করার জন্য এটাকে কাজে লাগিয়েছো কি?
তখন তারা কী উত্তর দিবে, যারা বিশ্বাস করে যে, ইসলামী স্কলাররা তাঁদের মেধাকে কাজে লাগাননি।
.
আসুন। এখনো সময় আছে। আমরা মেধাকে দ্বীনী কাজে ব্যবহার করি। যাতে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার উক্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

Leave a Reply